অরাজ
কার্ল মার্ক্স ১৮১৮-১৮৭৫ অার্টওয়ার্ক: তুলিো ফাজিম সূত্র : পিনটারেস্ট
প্রচ্ছদ » দানিয়েল গ্যাঁরা।। মুক্তিপরায়ণ মার্ক্স?

দানিয়েল গ্যাঁরা।। মুক্তিপরায়ণ মার্ক্স?

অনুবাদ: তানভীর আকন্দ

প্যারি কমিউন দমনের দুইদিন বাদে আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী সমিতির সাধারণ পর্ষদের উদ্দেশ্যে মার্ক্স তার বিখ্যাত বিবৃতি ফ্রান্সের গৃহযুদ্ধ  প্রকাশ করেন। মুক্তিপরায়ণদের অনুপ্রেরণা যোগানোর মতো একটি লেখা এটি। আন্তর্জাতিকের উদ্দেশ্যে লেখা এ বিবৃতিতে বাকুনিনের ব্যাপক প্রভাব লক্ষ করা যায়। ১৮৪৮ সালের কমিউনিস্ট ইশতেহারের কিছু অনুচ্ছেদের পুনরালোচনা উঠে আসে এখানে। ইশতেহারে মার্ক্স এবং এঙ্গেলস্ ধাপে ধাপে প্রলেতারিয়েতের পর্যায়ক্রমিক ক্রমবিকাশের ধারণা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যার প্রথম ধাপ ছিল, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল। আর এর মাধ্যমে উৎপাদনের যন্ত্রসমূহ, পরিবহণ ব্যবস্থা এবং অর্থ ব্যবস্থাপনা ধাপে ধাপে রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীভূত হবে। দীর্ঘ ক্রমবিকাশের পর যখন শ্রেণিশত্রুতার বিলুপ্তি ঘটবে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এর রাজনৈতিক চরিত্র হারাবে কেবলমাত্র তখনই সমস্ত উৎপাদন কেন্দ্রীভূত হবে রাষ্ট্রের বদলে ‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের’ হাতে। আর এই শেষোক্ত মুক্তিপরায়ণ সংঘে একের স্বাধীন উন্নয়নই সমগ্রের স্বাধীন উন্নয়নের শর্ত হয়ে ওঠবে।

কার্ল মার্ক্স
১৮১৮-১৮৭৫
আর্টোয়ার্ক: পি. নাসারভ ও এন গেরেলজুক
সূত্র: পিনটারেস্ট

ফরাসি সমাজতান্ত্রিকরা মূল জার্মান ভাষায় প্রকাশিত কমিউনিস্ট ইশহেতারের সাথে পরিচিত না থাকলেও ১৮৪৮ সাল থেকেই বাকুনিন এর সাথে পরিচিত ছিলেন। এবং তিনি এই পদ্ধতির সমালোচনা করার সুযোগও হাতছাড়া করেননি যেখানে বিপ্লবকে দুই ভাগে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। প্রথম ভাগে তা প্রবলভাবে রাষ্ট্রকর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হবে। তিনি বলেছিলেন,

রাষ্ট্র যখন নিজেকে একবার ভূমির একচ্ছত্র মালিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে বসেছে…তখন সে নিজেই একমাত্র পুঁজিবাদী, ব্যাংকার, ঋণদাতা, সংগঠক ও সমস্ত জাতির কাজের অধিকর্তা হয়ে উঠছে এবং এই কাজের দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্যের পরিবেশকের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হচ্ছে। এটাই প্রকৃত আদর্শ, আধুনিক কমিউনিজমের অপরিহার্য নীতি।

এবং

এই বিপ্লব সংগঠিত হবে পর্যায়ক্রমিকভাবে বা জবরদস্তির মাধ্যমে বর্তমান ভূসম্পত্তির মালিক ও পুঁজিবাদীদের বাজেয়াপ্তকরণের দ্বারা, এবং রাষ্ট্র কর্তৃক সমস্ত জমি ও পুঁজির দখলদারিত্বের মাধ্যমে, যাতে করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তার মহৎ উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়। আর এই বিপ্লবকে অবধারিতভাবেই অত্যন্ত ক্ষমতাশালী এবং কেন্দ্রীভূত হতে হবে। রাষ্ট্র তার নিয়োগকৃত প্রকৌশলী এবং আজ্ঞাবাহী সুসংগঠিত গ্রামীণ শ্রমিকসেনাদের দ্বারা জমি চাষের তদারকি ও পরিচালনা করবে। একই সাথে বিদ্যমান সমস্ত ব্যাংকের ধ্বংসাবশেষের ওপর এমন একটি একক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করবে যা রাষ্ট্রীয় উৎপাদন ও জাতীয় বাণিজ্যের প্রতিটি ক্ষেত্র তত্ত্বাবধান করবে।

বাকুনিন আরও বলেন,

মার্ক্সের গণরাষ্ট্রে বিশেষাধিকার-প্রাপ্ত কোনো শ্রেণি বিরাজ করবে না বলা হয়ে থাকে। সকলেই সমান, শুধু আইনগত ও রাজনৈতিকভাবেই না, বরং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও। অন্তত, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাই বলা হয়ে থাকে। যদিও আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে, এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা আদৌ সম্ভব কিনা। বিশেষ করে যখন তাদের প্রস্তাবিত পদ্ধতি ও যে উপায় তারা বেছে নিয়েছে তা বিবেচনায় আনি। আপাতদৃষ্টিতে বিষেশাধিকারপ্রাপ্ত কোনো শ্রেণি আর থাকবে না, কিন্তু সরকার থাকবে। এবং মনে রাখবেন, অতিশয় জটিল এক সরকার বিরাজ করবে, যা অন্যসকল সরকারের মতো জনগণকে কেবল রাজনৈতিক অর্থে শাসন ও পরিচালনাই করবে না, বরং উৎপাদন, সম্পত্তির ন্যায্য বন্টন, কৃষিকাজ, লেনদেনের সংস্থাপন ও উন্নয়ন, বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ও সংগঠন, এবং অবশ্যই একমাত্র ব্যাংকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের মাধ্যমে উৎপাদনের পুঁজি খাটানোতে তার নিজস্ব নিয়ন্ত্রণের প্রতি মনোনিবেশ করে অর্থনীতিকেও তা পরিচালনা করবে।

মিখাইল বাকুনিন
(১৮১৪-১৮৭৬)
পোট্রেট: নিকিতা ইফরেমভ
সূত্র: সাৎসি আর্ট

বাকুনিনের সমালোচনায় প্ররোচিত হয়ে মার্ক্স ও এঙ্গেলস ১৮৪৮ সালে প্রণীত তাদের মাত্রাতিরিক্ত রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের ধারণা সংশোধন করার প্রয়োজন বোধ করেন। ১৮৭২ সালের ২৪শে জুন, ইশতেহারের নতুন এক সংস্করণের ভূমিকায়  ‘বেশ কিছু ক্ষেত্রে’ ১৮৪৮ সালের লেখাটিতে প্রশ্নবিদ্ধ অনুচ্ছেদে ‘ভিন্ন ভাষা’ ব্যবহার করার বিষয়ে সম্মত হন তারা। এই সংস্করণের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে তারা(অন্যদের মধ্যে) বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির বিপ্লবের (১৮৪৮) মাধ্যমেই আমরা প্রথম ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা পাই এবং পরে, আরও অভিজ্ঞতা লাভ হয় প্যারিস কমিউনের মাধ্যমে, যেখানে প্রথমবারের মতো প্রলেতারিয়েত শ্রেণি দুইমাসের জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে ছিল।’ তারা সিন্ধান্তে পৌঁছান যে, ‘এই কর্মসূচি (ইশতেহার) কিছুকিছু অনুপুঙ্খ বর্ণনায় সেকেলে হয়ে পড়েছে। কমিউনের মাধ্যমে একটা ব্যাপার বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়ছে— ‘শ্রমিকশ্রেণি  আগে থেকে তৈরি রাষ্ট্রযন্ত্রটা শুধু দখল করেই তাকে নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য কাজে লাগাতে পারে না।’ ১৮৭১ এর বিবৃতিতে মার্ক্স ঘোষণা করেন, ‘কমিউন হচ্ছে রাজনৈতিক কাঠামোর সেই চূড়ান্ত আবিষ্কার যার দ্বারা শ্রমের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সৃষ্টি করা যেতে পারে।’

ফ্র্যাঞ্জ মেরিং তার কার্ল মার্ক্সের জীবনীগ্রন্থেও এই বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘ইশতেহারের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফ্রান্সের গৃহযুদ্ধ  আমাদের নতুন করে ভাবায়। ইশতেহারে  রাষ্ট্রের বিলুপ্তি সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, যদিও একে একটা দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেখানে। কিন্তু আরও পরে, মার্ক্সের মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে লেনিং আমাদের নিশ্চিত করেন যে এঙ্গেলস নৈরাজ্যবাদী জোয়ারের সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে এই সংশোধনী বর্জন করে পুরাতন ইশতেহারের  ধারণায়ই ফিরে যান।

১৮৭১ সালের বিবৃতি লেখকের এই ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাওয়া বরাবরই বাকুনিনের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করতো; কমিউন-এর ব্যাপারে তিনি লেখেন,

সবখানেই এই বিদ্রোহ এত প্রভাব বিস্তার করেছিল যে, এমনকি মার্ক্সবাদীরাও বুঝতে পারলেন, একে সসম্ভ্রমে স্যালুট জানাতে হবে তাদের। কেননা এই বিদ্রোহের মাধ্যমে মার্ক্সবাদীদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। বাস্তবে তারা এরচাইতেও বেশি করেছিল, সরল যুক্তি ও নিজেদের আবেগ-অনুভূতি বিসর্জন দিয়ে এমন কর্মসূচি ও উদ্দেশ্য নিজেদেরও ছিল বলে দাবি করতে থাকল তারা। যদিও এটা আসলে হাস্যকর মিথ্যাপ্রচারণা ছাড়া আর কিছুই না কিন্তু এছাড়া কোনো গত্যন্তরও ছিল না তাদের। এটাই করতে হতো, নাহলে ভরাডুবি ঘটত, বর্জন করা হতো তাদের। সবার মাঝে এতটাই আবেগ সঞ্চার করেছিল এই বিপ্লব।

বাকুনিন আরও খেয়াল করলেন,

ইশতেহারের কিছু কিছু পৃষ্ঠা যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে করে, সে ব্যাপারে হেগের মহাসভায় (সেপ্টেম্বর ১৮৭২) এঙ্গেলসকে বেশ ভয় পেতে দেখা যায়। এবং সাগ্রহের সাথেই তিনি একে মান্ধাতা আমলের ডকুমেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন, এবং বলেন এর ধারণাগুলো নাকি তারা (মার্ক্স এবং এঙ্গেলস) ব্যক্তিগতভাবে পরিত্যাগ করেছেন। যদি তিনি এ কথা বলে থাকেন তাহলে তা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না, কারণ মহাসভার আগে মার্ক্সবাদীরা দেশে দেশে এই ডকুমেন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে।

বাকুনিনের শিষ্য জেমস গিয়োম জুরা ফেডারেশানে ১৮৭১ সালের বিবৃতি পাঠ করে প্রতিক্রিয়া জানান এইভাবে,

এই বিস্ময়কর নীতির ঘোষণার মাধ্যমে মার্ক্স ফেডারালিস্ট ধারণাগুলোর সপক্ষে অবস্থান নিয়ে তার নিজস্ব কর্মসূচি বর্জন করেন। আসলেই কি পুঁজি  গ্রন্থের লেখকের কোনো সত্যিকারের পরিবর্তন ঘটেছে নাকি তিনি ঘটনাচক্রে পড়ে কিছুটা সাময়িক উচ্ছ্বাসের বশবর্তী হয়ে আত্মসমর্পন করলেন? নাকি এটা তার কোনো চালাকি, কমিউনের কর্মসূচির প্রতি আপাত আনুগত্য প্রকাশ করে এর সাথে জড়িত মর্যাদার ফায়দা লুটাই তার লক্ষ্য।

আর্তুর লেনিং, বাকুনিনের রচনাবলীর মার্জিত সংস্করণ তৈরির জন্য যার কাছে আমরা ঋণী, যেই রচনাবলী এখন অবধি প্রকাশিত হয়েই চলেছে, আমাদের সময়ে তিনি মার্ক্সের অন্যান্য লেখার সাথে এই বিবৃতিতে প্রকাশিত চিন্তাভাবনার অসঙ্গতি বেশ জোরালোভাবেই প্রকাশ করেছিলেন:

ইতিহাসের এ এক প্রহসন, যেসময়ে প্রথম আন্তর্জাতিকে কর্তৃত্ববাদী ও কর্তৃত্ববিরোধী দলের মধ্যে সংঘাত চূড়ান্ত রূপ লাভ করে, তখনই প্যারিসীয় প্রলেতারিয়েতদের বিপ্লবী অভ্যুত্থানের ব্যাপক প্রভাব দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে মার্ক্স এই বিপ্লবের ধারণাগুলোর সাথে সুর মিলিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করতে থাকেন (যেগুলো তার নিজের চিন্তাভাবনার সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল)। এগুলোকে কর্তৃত্ববিরোধী দলের কর্মসূচি মনে হতে পারে, অথচ যাদেরকে তিনি যেকোনো উপায়েই হোক প্রতিরোধ করে আসছিলেন (আন্তর্জাতিকে) … এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সাধারণ পর্ষদের এই চমৎকার বিবৃতির… কোনো জায়গা হতে পারে না ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে’ ।  গৃহযুদ্ধ  মার্ক্সীয় চিন্তাধারার চূড়ান্ত বিরোধী…মার্ক্সের রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রের সাথে প্যারিস কমিউনের কোনো সাদৃশ্যই নেই, বরং প্রুধোঁর চিন্তাভাবনা ও বাকুনিনের ফেডারালিস্ট তত্ত্বের সাথেই এর সাদৃশ্য বেশি… মার্ক্সের ভাষ্যমতে, ‘কমিউনের মূল নীতি হচ্ছে শ্রমিকদের স্বায়ত্ত্বশাসনের দ্বারা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কেন্দ্রীভূতকরণকে প্রতিস্থাপন করতে হবে। এবং স্বায়ত্ত্বশাসিত ছোট ছোট এককের ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করে কর্মোদ্যোগের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, যতক্ষণ না রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা আনা সম্ভব হচ্ছে… প্যারিস কমিউনের লক্ষ্য এমন না যে রাষ্ট্র শুকিয়ে মরুক বরং অবিলম্বে এর বিলুপ্তি ঘটানোই এর উদ্দেশ্য.… রাষ্ট্রের বিলুপ্তি আর ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার এবং সামাজিক অগ্রগতির উন্নত পর্যায়ের, যেই পর্যায়ের শর্তই হচ্ছে উৎপাদনকাঠামোর উন্নত রূপ, তার চূড়ান্ত এবং অনিবার্য ফলাফল হয়ে রইল না আর।

পেইন্টিং: প্যারিস কমিউন
সূত্র: রবার্ট গ্রাহামের এনার্কিজম ওয়েবলগ

লেনিং আরো বলেন,

মার্ক্সের রাষ্ট্রের বিলুপ্তির পূর্বলক্ষণ হিসেবে নির্ধারণ করে দেয়া শর্তসমূহের কোনোটিকে গ্রাহ্য না করেই প্যারি কমিউন রাষ্ট্রেকে বাতিল করে দিচ্ছে,… বুর্জোয়া রাষ্ট্র প্রতিহত করে তার স্থলে অন্য এক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা কমিউনের উদ্দেশ্য ছিল না…নতুন রাষ্ট্রযন্ত্র তৈরি করা এর লক্ষ্য ছিল না, বরং ফেডারালিস্ট অর্থনীতির ভিত্তিতে সংগঠিত সমাজের দ্বারা রাষ্ট্রের প্রতিস্থাপন করাই ছিল এর লক্ষ্য… ফ্রান্সের গৃহযুদ্ধে  রাষ্ট্রের ‘শুকিয়ে মরার’ কোনো উল্লেখ নেই বরং অবিলম্বে রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিলুপ্তির কথা বলা আছে এখানে।

একইভাবে মার্ক্স বিশেষজ্ঞ ম্যাক্সিমিলিয়াঁ রুবেলও স্বীকার করেন,

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে মার্ক্সের প্রলেতারিয়েতের জয় এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়ণের ধারণা প্যারিস কমিউনের বিবৃতিতে এসে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে, এবং সত্যিকার অর্থে কমিউনিস্ট ইশতেহার যেই ধারণা প্রচার করে তার সাথে এর যথেষ্ট পাথর্ক্য রয়েছে।

কার্ল মার্ক্স ও ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস
সূত্র: পিনটারেস্ট

যাই হোক, এই দুই চিন্তকের মধ্যে মতপাথর্ক্য লক্ষ করা যায়। ভালো-মন্দ যাই হোক, লেনিং মার্ক্সের মধ্যে একজন কর্তৃত্ববাদীকেই প্রত্যক্ষ করছেন, এবং প্যারি কমিউনের বিবৃতি মার্ক্সীয় সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার মধ্যে একটা ব্যতিক্রম মাত্র বলে দাবি করছেন। অন্যদিকে, রুবেল মার্ক্সকে মুক্তিপরায়ণ হিসেবেই দেখতে চাচ্ছেন, এবং এই বিবৃতিতে মার্ক্সীয় চিন্তাভাবনা চূড়ান্ত রূপ লাভ করছে বলেই মনে করছেন।

এসমস্ত কারণে, নৈরাজ্যবাদ ও মার্ক্সবাদের মধ্যে সংশ্লেষ খুঁজে বের করার জন্য ১৮৭১ সালের এই বিবৃতিকে একটা প্রারম্ভিক সূত্র হিসেবে দেখতে হচ্ছে আমাদের বর্তমান সময়ে এসে, এবং এই ভিন্ন দুটি চিন্তাধারার মাঝে একটা সন্তোষজনক মীমাংসা খুঁজে বের করা সম্ভব। প্যারি কমিউনের বিবৃতিকে বলা চলে তাই মুক্তিপরায়ণ মার্ক্সবাদী।

সম্পাদকীয় নোট: দেনিয়েঁ গ্যাঁরার ‘মুক্তিপরায়ণ মার্ক্সবাদ’ শিরোনামের দুইখন্ডের প্রথম পর্ব ‘মুক্তিপরায়ণ মার্ক্স’ প্রকাশিত হলো। দ্বিতীয় পর্ব ‘কেন মুক্তিপরায়ণ মার্ক্সবাদ’ শিরোনামে লেখাটিও শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।

উৎস: https://www.marxists.org/history/etol/writers/guerin/19xx/xx/libmarx.html

তানভীর আকন্দ