অরাজ
আর্টওয়ার্ক: কোভিড ক্রুসেড শিল্পী: ধ্রুবী আচারিয়া সূত্র: গুড হোমস
প্রচ্ছদ » জীবাণু যুদ্ধের ইতি?

জীবাণু যুদ্ধের ইতি?

  • মফিজুল হক

প্রথম কিস্তি

এখন সমস্ত পৃথিবী করোনা কম্পিত। এর মূলে আছে চীনের উহান শহরে এক ভাইরাসের দৃশ্যমান  আক্রমণ। এই ভাইরাস সমস্ত পৃথিবীকে সন্ত্রস্ত করে ফেলেছে। শুধু তাই নয় এই অতিআণুবিক্ষণিক ভাইরাসটি ২০০০ বছরেরও বেশি বয়সী বিশ্ব ব্যবস্থার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। এটি করোনা ঘরানার এক ভাইরাস এবং এর ইংরেজি নাম SARS-CoV-2। এই ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ বা অচল করার পাশাপাশি একাধিক অঙ্গ অচল করে ফেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি মানুষের প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধকে সাড়াকে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে সমর্থ হয়। এর আদি পুরুষের নাম SARS। উইকপিডিয়ার মতে করোনা ঘরানার প্রথম সার্স ভাইরাসটি প্রতিবেদিত হয় ২০০২-২০০৩ এর দিকে। তারপর এর একাধিক সংস্করণ বের হয়, সার্সের (Severe Acute Respiratory Syndrome) পর মার্স বা মের্স (Middle East Respiratory Syndrome)। প্রথম দিকের সার্স ভাইরাসগুলোর মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিক্রিয় করে ফেলার সক্ষমতা ছিল না। করোনা ঘরানার সর্বশেষ সার্স এই ভাইরাসটি বৈশ্বিক আতঙ্কের রূপ ধারণ করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন এটা বেটাকরোনা গোত্রের (… the spike (S) glycoprotein, that mediates cell entry and membrane fusion. SARS-CoV-2 S gene encodes 22 N-linked glycan sequons per protomer, which likely play a role in immune evasion and occluding immunogenic protein epitopes.। অর্থাৎ এটি একটি নতুন ধরনের সার্স-কোভি (SARS-CoV) এবং তারা এর নামকরণ করেছেন সার্স-কোভি-২। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরে এর নামকরণ করেছে Covid-19। কিন্তু করোনার তথা সার্স- কোভি-২ এর সাথে যুদ্ধের কী সম্পর্ক? তাও আবার জীবাণু যুদ্ধের? এমন প্রশ্নও করা যেতে পারে যে এমন কাজ কি আদৌ সম্ভব? শেষোক্ত প্রশ্নটির উত্তর হলো— তেমন করা অবশ্যই সম্ভব এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বর্তমান পর্যায়ে উপযুক্ত স্থানে এটা দক্ষ ভাইরোলজিস্ট বা অনুজীব বিজ্ঞানীর পক্ষে সহজেই করা সম্বব

আর্টওয়ার্ক: কোভিড ক্রুসেড
শিল্পী: ধ্রুবী আচারিয়া
সূত্র: গুড হোমস

এই ধরনের কাজকে আরএনএ সম্পাদনা (RNA editing) বলা হয়। আমি পাঠকদের সুবিধার একটি অনলাইন গোলটেবিলের অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করছি “Francis Boyle is well known for opining that COVID-19 is an engineered biological weapon, not a naturally-occurring mutation. He argues that the novel coronavirus appears to be engineered for “gain of function,” meaning that its ability to infect humans due to its perfectly-structured spike protein is the telltale sign of a bioweapon. Boyle’s view was recently supported by a new study led by vaccine researcher Nikolai Petrovsky of Flinders University in Australia, which compared the coronavirus spike protein’s ability to bind to human versus animal cells. The study found that COVID-19’s spike protein is perfectly tailored to powerfully bind with human cells, but cannot bind efficiently with cells from a large number of sampled animal species. Therefore, the authors conclude, the virus cannot have jumped to humans from any animal intermediary. Instead, it must have become specialized for human penetration by “living” in human cells. There is only one plausible mechanism by which the virus could have existed in human cells long enough to become so perfectly specialized: It must have been introduced into human cell cultures in a laboratory. Germ warfare scientists would have taken a bat coronavirus, put it into cultured human cells, and run it through many generations, selectively breeding the virus to get better and better at binding with human cell receptors.” [ফ্রান্সিস বোয়েল একজন আন্তর্জাতকি আইনের অধ্যাপক এবং জৈব অস্ত্র গবেষণা বিরোধী ব্যক্তিত্ব। তার মতে ভাইরাসটি উহান ইন্সিটিটউট অফ ভাইরোলজিতে তৈরি হয়েছে।]

সেই প্রসঙ্গে যাবার আগে আমি উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসাভেনির কয়েকটি কথা উদ্ধৃত করছি: … The army in this war is without mercy. It is without any milk of human kindness. It is indiscriminate— it has no respect for children, women, or places of worship. This army is not interested in spoils of war. It has no intention of regime change. It is not concerned about the rich mineral resources underneath the earth. It is not even interested in religious, ethnic or ideological hegemony. Its ambition has nothing to do with racial superiority. *It is an invisible, fleetfooted, and ruthlessly effective army*… আমি যাকে জীবাণু যুদ্ধ বলছি তিনি তাকে জীবাণু সৈনিক বলছেন এবং উইকিপিডিয়াতে জীবাণুযুদ্ধকে জৈব যুদ্ধ বলা হয়েছে। উইকিপিডিয়ার মতে— Biological warfare (BW)— also known as germ warfare— is the use of biological toxins or infectious agents such as bacteria, viruses, insects, and fungi with the intent to kill or incapacitate humans, animals or plants as an act of war.

জীবাণু যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ক্রমপঞ্জী পেতে হলে এখানে দেখুন। এখনকার কোভিড-১৯ নামের বিশ্বমারীর গোড়ায় আছে জীবাণু যুদ্ধ। যুদ্ধের এমন ধারাণা কৌশল একেবারে নতুন নয় বরং সেই প্রাচীন কাল থেকেই চলছে। এক সময় তীর বা বর্শায় ফলায় বিষ মিশিয়ে সেই তীর ছুঁড়ে দেওয়া হতো শত্রুর দিকে। আমাজনের আদিবাসীরা বিষাক্ত সুই বাঁশে ফু দিয়ে ছুঁড়ে প্রাণী বা শিকারকে অবশ করে ফেলতো। মধ্যযুগে প্লেগকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ১৭৫৭ থেকে ১৭৬৩ পর্যন্ত ইয়োরোপীয় শক্তিগুলো সাত বছর স্থায়ী এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সেই যুদ্ধে শত্রুদের গুটি বসন্তের বীজ সংক্রামিত কম্বল দিয়ে ঘায়েল করার পরিকল্পনার দালিলিক প্রমাণও আছে। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হামাস নেতা খালেদ মেশালের কানে বিশেষভাবে তৈরি ফেন্টানাইল (এক ধরনের মাদকদ্রব্য) ঢুকিয়ে দিয়ে হত্যার চেষ্টা স্মরণ করা যেতে পারে। ১৯৯৭ সালে ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের এজেন্টরা কানাডীয় পাসপোর্ট নিয়ে জর্ডানে প্রবশে করে এবং সেখানে বসবাসরত হামাস নেতা খালেদ মেশালের কানের ভেতর বিশেষভাবে তৈরি করা ফেন্টানাইল প্রয়োগ করে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু মেশালের দেহরক্ষীর সতর্কতার দরুন অভিযানটি ব্যর্থ হয় এবং আক্রমণকারীরা ধরা পড়ে যায়। খালেদ মেশালের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে দাঁড়ালে ইসরায়েল এবং জর্ডানের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যাবার উপক্রম হয়। মেশালের দেহে কোন বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে তা না জানার কারণে জর্ডানের বাদশা হুসেন ইসরায়েলের কাছে বিষের অ্যান্টিডোট দাবী করেন। তা না হলে ধৃত মোসাদ চরদের বিচারের আওতায় আনার হুমকি প্রদানসহ যুদ্ধ ঘোষণারও হুমকি দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের মধ্যস্থতায় এক পর্যায়ে ইসরায়েল অ্যান্টিডোট দিতে রাজি হলে বাদশাহ হুসেন ইসরাইল থেকে তা সরাসরি নেবার বদলে তার ফর্মুলা দাবী করেন এবং শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলকে চিকিৎসা পদ্ধতিটি জর্ডানকে হস্তান্তর করতে হয়। খালেদ মেশাল সুস্থ হন। বিনিময়ে জর্ডান মোসাদের এজেন্টদের ছেড়ে দেয়। এসংক্রান্ত একটি অডিও এবং উইকিপিডিয়ার খালেদ মেশাল সংক্রান্ত পেজটি এখানে পাওয়া যাবে। ইসরায়েল বিডাব্লিউ কনেভেনশনে সই করেনি এবং এখনো জৈব অস্ত্রের গবেষণা অব্যাহত রেখেছে।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষে বহু দরকষাকষির পর ১৯২৫ সালে জেনেভা কনভেনশন করা হলেও এই কনভেনশন রাসায়নিক বা জৈব অস্ত্রের বিস্তার রোধ বা একে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ১৯৭৫ সালে আলাদাভাবে বায়োলজিকাল উইপনস কনভেনশন করা হয় (BWC) এবং বিশ্বের প্রায় সব দেশই তাতে স্বাক্ষর করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬৯ সালে দাপ্তরিকভাবে এর জীবাণু যুদ্ধের গবেষণা পরিত্যাগ করেছে বলে দাবী করছে। তারা বলে “The United States shall renounce the use of lethal biological agents and weapons, and all other methods of biological warfare. The United States will confine its biological research to defensive measures such as immunization and safety measures.” । এটা করা হয় রোনাল্ড রিগান যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন। আমি উইকিপিডিয়ার United_States_biological_weapons_ program অংশ থেকে একটি গবেষণাধীন জীবাণু এবং বিষের একটি তালিকা তুলে ধরছি, In addition to the agents that were ready to be used, the U.S. program conducted research into the weaponization of more than 20 other agents. They included: smallpox, EEE and WEE, AHF, Hantavirus, BHF, Lassa fever, Coronavirus,[36] melioidosis,[36] plague, yellow fever, psittacosis, typhus, dengue fever, Rift Valley fever (RVF), CHIKV, late blight of potato, rinderpest, Newcastle disease, bird flu, and the toxin ricin. তা সত্ত্বেও, অনেক দেশ বিডাব্লিউসি সই করা সত্বেও, এখনো গোপনে জীবাণু যুদ্ধের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকা সেপ্টেম্বর ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন ডলার জৈব অস্ত্র গবেষণায় ব্যয় করেছে। পাঠক কি লক্ষ্য করেছেন ওপরের জীবাণু গবেষণার তালিকাটিতে করোনা ভাইরাসও রয়েছে। তবে এই তালিকাটিতে একটি ভাইরাস অনুপস্থিত। সেই ভাইরাসটি হল HIV। এইচআইভি নিয়ে আমি অন্য কোথাও এবং পরে আলোচনার আশা রাখি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘চাইনিজ ভাইরাস’ আখ্যায়িত করেছেন। একদল বিজ্ঞানী প্রকাশ্যেই বলছেন এটা প্রাকৃতিক ভাবেই হয়েছে। তারা মনে করছেন ভাইরাসটি হয়তোবা এক দশক বা তারও আগে প্রাণী থেকে মানবদেহে প্রবেশ করেছে। যদি তাই হয় তাহলে প্রথমত: মার্কিনীরা কেন একে চীনা ভাইরাস বলতে চায়? দ্বিতীয়ত: হয়তো বা সেই একই কারণে এক দশক থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ফ্লুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত এই মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৭,০০০, ২০১১ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ছিল ১২,০০০, ২০১২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ছিল ৪৩,০০০, ২০১৩ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ছিল ৩৮ হাজার, ২০১৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ছিল ৫১,০০০, ২০১৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ছিল ২৩,০০০, ২০১৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ছিল ৩৮,০০০ এবং ২০১৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ছিল ৬১,০০০ । এই বছরের (২০২০) অঘোষিত সংখ্যাটি ৮০,০০০ (অনির্ভরযোগ্য)। কিন্তু এত মৃত্যু সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা পৃথিবীর মানুষ এতটা আতঙ্কিত ছিল না। এক দশক আগেই এই ভাইরাসটি আবির্ভূত হলে এত দিনে আমরা এইচআইভির মতো মোটামোটিভাবে কাজ করে এমন একটি ভ্যাকসিন পেয়ে যেতাম। কেননা তখন সীমিত আকারে হলেও এখনকার মতই আতঙ্ক তৈরি হতো এবং গবেষণা ও একে প্রতিরোধ করার কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেত। ওপরে এসসিএমপির যে প্রতিবেদনের কথা বলা হয়েছে আমি তার থেকে সরাসরি কিছুটা উদ্ধৃত করছি: Though there could be other possibilities, the scientists said the coronavirus carried a unique mutation that was not found in suspected animal hosts, but was likely to occur during repeated, small-cluster infections in humans.

যদি আসলেই তেমন হয়ে থাকে সেই মানব গোষ্ঠীর এতদিনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার কথা। আমরা বিগত ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে রোগ-বাইলাইর কারণে কোনো মানব গোষ্ঠীর (ছোটো বা বড় এমনকি পাড়া বা মহল্লা পর্যায়েও) নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার কথা শুনতে পাইনি। তাহলে সেই ‘রিপিটেড স্মল-ক্লাস্টার ইনফেকশনস’ কোনো গবেষণাগারে হয়েছিল? বিজ্ঞানীদের মতামত কিন্তু সাধারণভাবে এমন ধারণার পক্ষেই বলছে:

“The analysis explains that there is still no clear evidence to point to a precise origin of the virus. The researchers explained, based on the genetic makeup and samples of the virus, it remains unclear whether SARS-CoV-2 adapted inside an intermediary animal host, within a human, or in a laboratory setting. It could have potentially jumped from species to species within a lab.

“Even the possibility that a non-genetically-engineered precursor could have adapted to humans while being studied in a laboratory should be considered, regardless of how likely or unlikely,” the authors wrote.”১০

আর যদি তাই হয় তাহলে একথাও বলা যাবে যে, সেই সিআরএসপিআর গবেষণাগারটি চীনের কোথাও ছিলো না। [(CRISPR https://en.wikipedia.org/wiki/CRISPR নিয়মিত ছেদসম্বলিত গুচ্ছের ক্ষুদ্র প্যালিনড্রমিক (উল্টো দিক থেকে শুরু করলেও যার উচ্চার বা বিস্তিৃতির কোনো পরিবর্তন হয় না) পুনরাবৃত্তিমূলক সংক্রমণ বা সঞ্চালন।] একজন মার্কিন গবেষক উহানের ভাইরাস গবেষণাগার সম্পর্কে বলছেন এটা একটা অত্যাধুনিক এবং চার স্তর নিরাপত্তা বিশিষ্ট গবেষণাগার। তিনি এই গবেষণাগারের সাথে মার্কিন সহায়তাপ্রাপ্ত একটি প্রকল্পে কাজ করেছেন। তার ভাষ্য: “I know that we worked together to develop very stringent safety protocol, and it’s highly unlikely this was a lab accident,” Jonna Mazet, professor of epidemiology and disease ecology at the UC Davis School of Veterinary Medicine, told Business Insider. … … “If you look at the labs in Southeast Asia that have any coronaviruses in culture, there are probably two or three and they’re in high security,” he said. “The Wuhan Institute of Virology does have a small number of bat coronaviruses in culture. But they’re not [the new coronavirus], SARS-CoV-2. There are probably half a dozen people that do work in those labs. So let’s compare 1 million to 7 million people a year to half a dozen people; it’s just not logical.”১১। কিছু বিজ্ঞানী দাবী করছেন যে কিছু জৈব নিরাপত্তা স্তর-২ (বিএসএল-২) গবেষণাগার সার্স-কোভি নিয়ে গবেষণা করছে এবং এই গবেষণাগারগুলো থেকে সার্স-কোভি ভাইরাসটি বেরিয়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়া সম্ভব১২। যদি তাই হয়ে থাকে তবে সেটি আমেরিকান সিডিসির ২০০৪ সালের দেয়া সার্স-কোভি নিরাপত্তা গাইডলাইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন১৩। কোনো জৈব নিরাপত্তা স্তর-২ (বিএসএল-২) বিশিষ্ট গবেষণাগারের সার্স-কোভি নিয়ে গবেষণার অনুমতি নেই এবং তা আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রথারও পরিপন্থী। তবে এই গবেষণাপত্রের উপসংহারে লেখকরা স্বীকার করছেন যে ভবিষ্যতে গবেষণা বা প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত তাদের বর্তমান ধারণার বিপক্ষে চলে যেতে পারে। শুধু তাই নয় এই একই লেখায় বলা হচ্ছে  “… New polybasic cleavage sites have been observed only after prolonged passage of low-pathogenicity avian influenza virus in vitro or in vivo”. যদি এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জায় ক্রমাগত সঞ্চালনের মাধ্যমে পলিবেসিক ফিউরিন খাঁজ— এই খাঁজটিই ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে দেহের কোষের সাথে সংযুক্ত করতে অর্থাৎ সংক্রমণ সৃষ্টিতে নির্ধারক ভূমিকা পালন করে— তৈরি করা যায় তাহলে তা সার্স-কোভির ক্ষেত্রেও করা যাবে। লেখকরা আরো বলছেন, “… Furthermore, a hypothetical generation of SARS-CoV-2 by cell culture or animal passage would have required prior isolation of a progenitor virus with very high genetic similarity, which has not been described.Subsequent generation of a polybasic cleavage site would have then required repeated passage in cell culture or animals with ACE2 receptors similar to those of humans, but such work has also not previously been described.” এখন প্রশ্ন হলো এই কাজটি যদি কোনো সামরিক জীবাণু গবেষণাগারে করা হয়ে থাকে তবে তা কি সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব?

অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত পাওয়া জিনগুলো বিশ্লেষণ করে বলছেন উহানে যে ভাইরাসটি পাওয়া গেছে সেটি আমেরিকাতে যে ভাইরাসটি পাওয়া গেছে তার একটি সাবটাইপ। অর্থাৎ উহানের ভাইরাসটি মার্কিন ভাইরাসের উত্তরসূরী। মার্কিন ভাইরাসটি উহানে প্রাপ্ত ভাইরাসের উত্তরসূরী নয়১৪। সর্বশেষ গবেষণা তথ্য অনুযায়ী সার্স-কোভি-২ এর সংক্রমণ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের অক্টোবর ৬ থেকে ডিসেম্বর ১১ এর মধ্যে। এখানেও কথা থেকে যায়, এক্ষেত্রে যে কথাটি বলা হচ্ছে তেমন ধারা ফ্লুর প্রাদুর্ভাব ইয়োরোপ এবং আমেরিকায় হওয়ার নজির আছে। শুধু তাই নয়, একটি মার্কিন সংবাদপত্র বলছে, “1st known U.S. coronavirus deaths show community spread in CA could’ve started in mid-January or earlier, expert says”১৫। কমুনিটি সংক্রমণ হতে হলে এই ভাইরাসটিকে কমপক্ষে ৩০ দিন বা ৪০ দিন আগে সেই কমুনিটি তথা জনসম্প্রদায়ে প্রবেশ করতে হবে। মধ্য জানুয়ারি থেকে ৪০ দিন বাদ দিলে সময়টি হবে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ। তদুপরি ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম দিকের মৃত্যুগুলোতে কোনোভাবেই বাইরের পৃথিবীর যোগাযোগকে সম্পর্কিত করা যায়নি। দেখা যাচ্ছে যে চীনের উহান শহরের সংক্রমণ এবং আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সংক্রমণ প্রায় সমসাময়িক।

অন্যদিকে একজন বাঙ্গালী, আমি তার নাম পরিচয় জানিনা১৬,একটি ভিডিওতে বলছেন “এটা তৈরি হয়েছে আমেরিকার একটি শহরে (এই শহরটি সম্ভবত মেরিল্যান্ড শহর)। সাতাশি সালের শেষে বা আটাশি সালের একেবারে শুরুতে এই করোনাটা আবিষ্কৃত হয়। ১৯৯০ সালে প্রথম সিদ্ধান্ত হয় যে, এটি সাদ্দামের ওপর প্রয়োগ করা হবে। পরবর্তীতে আমরা যেটা জানতাম সেটা একটু ভিন্ন, সেটা হলো যে ২০২০ এর অক্টোবর নাগাদ কিছু মুসলিম রাষ্ট্রে এটাকে প্রয়োগ করা হবে। আমরা যেটা জানতাম মুসলিমদের যে একটি শত্রু রাষ্ট্র আছে তারা এটা করবে। কিন্তু ইতিমধ্যে যেটা হয়েছে সেটা হলো, যখন হংকং চায়নার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল তখন, হারভার্ডের একজন প্রফেসর এই টেকনোলজিটা চায়নাকে ট্রান্সফার করে। এফবিআই (মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা) সুনির্দিষ্ট একটি অভিযোগে হারভার্ডের সেই প্রফেসরকে গ্রেপ্তার করে। এফবিআই যখন একটা ট্রাপ করে সেটা চায়নার কাছ থেকে কিনে নিতে চায় তখন মিস হ্যান্ডেলিং-এর কারণে একটা অ্যাম্পুল ভেঙ্গে গিয়ে এই দুর্ঘটনাটা ঘটে। এটা কেউ ইচ্ছা করে করেনি। এটা (ভাইরাসটি) পুরোপুরি মানব সৃষ্ট এবং এটা মানুষের ক্ষতি করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। … “তবে ভাইরাস স্থানান্তরের দুর্ঘটনার কথাগুলো তথ্য এবং উপাত্ত দিয়ে সমর্থিত নয়। এমনকি এফবিআই সেই বিজ্ঞানীকে চীনের হাতে সার্স-কোভি-২ এর ফর্মুলা তুলে দেবার জন্য নয় বরং মার্কিন সরকারের গবেষণা অনুদান সহায়তা গ্রহণের সময় চীন সম্পৃক্ততা গোপনের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। যদি ভাইরাসটি চীনের কাছ থেকে গ্রহণের সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতো তাহলে মার্কিনীরা এটাকে চাইনিজ ভাইরাস বলার সাহস পেত না।তাছাড়া যদি ফর্মুলা বা কলাকৌশল চীনের হাতে চলে গিয়ে থাকে তাহলে সেটার মাধ্যমে তৈরি করা ভাইরাসের অ্যাম্পুল ফিরিয়ে নিয়ে এসেও আমেরিকার কোনো লাভ নেই। কারণ চীন পরে যেকোনো সময়ই সেটি আবার তৈরি করে নেবে।

আর্টওয়ার্ক: কোভিড ক্রুসেড
শিল্পী: ধ্রুবী আচারিয়া
সূত্র: গুড হোমস

২০১৯ সালের আগস্ট মাসে আমেরিকার সিডিসি মেরিল্যান্ডের ফোর্ট ডেট্রিক’র দুর্ঘটনাজনিত কারণে সৃষ্ট দূষণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে একটি সামরিক ল্যাবরেটরির কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। “Safety concerns at a prominent military germ lab have led the government to shut down research involving dangerous microbes like the Ebola virus. … The suspended research involves certain toxins, along with germs called select agents, which the government has determined have “the potential to pose a severe threat to public, animal or plant health or to animal or plant products.” … There are 67 select agents and toxins; examples include the organisms that cause Ebola, smallpox, anthrax and plague, and the poison ricin.১৭। এই ল্যাবরেটরিতে ইবোলা,গুটি বসন্ত, প্লেগ থেকে শুরু করে রিসিন বিষ পর্যন্ত মজুত ছিল। নিরাপত্তার অজুহাতে আমেরিকান সিডিসি দুর্ঘটনা বা দূষণের ধরন কোনোটাই প্রকাশ করেনি। শুধু এটুকুই বলেছে এই ল্যাবের গবেষণা এখন বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানে সার্স-কোভি-২ ভাইরাস মজুত ছিল না তা কি কেউ জোর গলায় বলতে পারবে? এসব গবেষণা চালু ছিল বলেই কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বায়োলজিকাল উইপনস কনভেনশনে কার্যকর যাচাইর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে? ফোর্ট ডেট্রিকে এমন ঘটনা অতীতেও ঘটেছে (১৯৭১ সালে)১৮। একটি গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে: “…It was later also discovered that some vials of Brucella as well as some diseased laboratory animals had gone missing from the same lab [25]. More recently, there were US government incidents involving the mishandling of anthrax in both 2014 [60] and 2015 [61]. In 2014, the USA also discovered over 300 previously unknown vials of agents that had been kept undocumented in their storage facilities for decades; some of these included smallpox [62]১৯। [অনেকেই হয়তোবা জানেন না যে সর্বোচ্চ ৪ স্তর নিরাপত্তা বিশিষ্ট না হলেও বাংলাদেশে একটি ৩ স্তর নিরাপত্তা বিশিষ্ট জীবাণু গবেষণাগার রয়েছে। সেই গবেষণাগারটি হলো আইসিডিডিআর,বি। উপরোল্লিখিত সূত্রটিতে বিশ্বব্যাপী জৈব গবেষণাগারের একটি তালিকা পাওয়া যাবে। যার মধ্যে কিছু সংখ্যক গবেষণাগার জৈব অস্ত্র গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছে। উপরোক্ত সূত্রের পৃ. ১১-১৫ দ্রষ্টব্য]।

পাশাপাশি চীনের কোনো সামরিক গবেষণাগারে দুর্ঘটনা বা দূষণের কারণে গবেষণাগার বন্ধ করার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তাহলে চীনকে দোষারোপ করা কি উদ্দেশ্য প্রণোদিত বা এই দোষারোপের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে? আমেরিকা এখানেই ক্ষান্ত হয়নি। সেখানকার কেউ একজন একটি আদালতে চীনের বিরুদ্ধে ২০ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের মামলা ঠুকে দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের আখ্যায়নের হয়তো বা একটি রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরী কর্মসূচীর পরিচালক মাইক রায়ানের মতে এমন লেবেলিং ভাইরাসের জন্য চীনকে অভিযুক্ত করা ছাড়াও জাতিগত প্রোফাইলিং (Racial Profiling) এর মাধ্যমে বর্ণবাদী আচরণ উসকে দিতে পারে। তার মতে ভাইরাস ভাইরাসই। এর কোনো জাত-পাত নেই,ধনী-গরিব বোঝে না। কিন্তু আমি এসব বলার জন্য এই লেখার অবতারণা করিনি।

তথ্য সূত্র:

(১)   https://www.biorxiv.org/content/10.1101/2020.03.26.010322v1

(২) https://www.quora.com/Was-the-coronavirus-created-in-a-lab/answer/Volodymyr-Bezverkhniy?ch=1&share=313182a6&srid=uX7n9Q&fbclid=IwAR18YRaCoUhvV4hC9ODYGaIkplC7wis-uO11KxyGA1cIqv2WJdMPFwLz5Ec

(৩) এইচটিটিপিএস://ডাব্লুডাব্লুডাব্লু.ইউএনজেড.কম/kbarrett/ron-unz-and-other-truth-seekers-to-explore-corona-bioweapon-hypothesis-this-sunday/

(৪) https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC1326439/

(৫) Audio file: https://russia-insider.com/en/how-israel-turned-fentanyl-weapon-war-ftn-podcast-transcript/ri30208

https://en.wikipedia.org/wiki/Khaled_Mashal

(৬) https://en.wikipedia.org/wiki/United_States_biological_weapons_program

(৭) https://www.opednews.com/articles/Is-Covid-19-a-Biological-W-by-Roger-Copple-Biological-Warfare_China_Coronavirus_Covid-19-200324-16.html

(৮) https://www.scmp.com/news/china/science/article/3077442/coronavirus-pathogen-could-have-been-spreading-humans-decades

(৯) https://www.cdc.gov/flu/about/burden/index.html

(১০)    https://www.newsweek.com/scientists-shouldnt-rule-out-lab-source-coronavirus-new-study-says-1504656

(১১) https://sputniknews.com/science/202005031079178965-highly-unlikely-us-researcher-rebuts-coronavirus-lab-leak-theory

(১২)    https://www.nature.com/articles/s41591-020-0820-9.pdf

(১৩)    https://www.cdc.gov/sars/guidance/f-lab/app5.pdf

(১৪) https://www.medrxiv.org/content/10.1101/2020.04.27.20081349v1.full.pdf

(১৫)    https://ktla.com/news/california/1st-known-u-s-coronavirus-deaths-show-community-spread-in-ca-may-have-began-in-mid-january-or-earlier-expert-says/

(১৬) https://www.facebook.com/mohammadebadat.hossain/videos/2613020855618306

(১৭) https://www.nytimes.com/2019/08/05/health/germs-fort-detrick-biohazard.html

(১৮) https://edition.cnn.com/2009/US/04/22/missing.virus.sample/index.html

(১৯)    https://www.researchgate.net/publication/331496732_The_global_proliferation_of_high-containment_biological_laboratories_understanding_the_phenomenon_and_its_implications/link/5cff5f3e92851c874c5da131/download

মফিজুল হক

লেখক অনুবাদক ও গবেষক। জন্ম: ১৯৫৯, নওশেরা, তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তান। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ডা. লিয়াকত আলির সম্পাদনায় প্রকাশিত মুক্তবুদ্ধির মুখপত্র ‘প্রেক্ষিত’-এর সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। সৌখিন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। ব্যাকআপ সফটঅয়্যার ‘ডেটা সেফ’ তাঁরই অবদান। কাজ করেছেন বেঙ্গল গ্যালারিতেও। ‘ফারাক্কা, ট্রানজিট, বাঙালি, বাংলাদেশ : সমস্যা ও সমাধান প্রস্তাব’ তাঁর দু;সাহসী পুস্তিকা। আধুনিক বর্জব্যবস্থাপনার ওপর দু’টো ইংরেজি বই গ্যোটে ইনস্টিটউট, ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া প্রকাশিত গ্রন্থ: সন্ত্রাসের ব্যাকরণ: নঞর্থক সত্তাতত্ত্বের প্রপঞ্চতাত্ত্বিক রূপরেখা : প্রথম খণ্ড, নারী-পুরুষ বৈষম্য। ই-মেইল: mofizul_hoq@yahoo.com