অরাজ
ছবি: ধ্রুব চন্দ্র রায়
প্রচ্ছদ » রাম শেপার্ড ভীনাভেণী ।। ভারতের দেশজ হার্ড ইম্যুনিটির ধারণা কি কোভিড-১৯ এর সমাধান দিতে পারে?

রাম শেপার্ড ভীনাভেণী ।। ভারতের দেশজ হার্ড ইম্যুনিটির ধারণা কি কোভিড-১৯ এর সমাধান দিতে পারে?

অনুবাদ: নাঈমা নুসরাত যূথীকা

ডক্টর রাম শেপার্ড ভীনাভেণী বর্তমানে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্মের বোর্ড অব স্টাডিজের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডক্টর রামের “ভারতের দেশজ হার্ড ইম্যুনিটির ধারণা কি কোভিড১৯ এর সমাধান দিতে পারে ?” নামক গবেষণা পত্রটি প্রথম প্রকাশ করে চাইনিজ জার্নাল Traditional Medicine Research- ২০২০ এর মে মাসে। পরবর্তীতে জুলাই ২০২০ এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা (WHO) তাদের বিশ্ব সাহিত্য এবং কোভিড১৯ সম্পর্কীয় গবেষণা পত্রের মধ্যে এটিকে অন্তর্ভূক্ত করে। ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তর করেছেন নাঈমা নুসরাত যূথীকা। যূথিকা ভারতের হায়দারাবাদে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমানে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মহামারির সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করতে প্রাচীন প্রচলিত রোগ নিরাময় পদ্ধতিগুলোকে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রচলিত এবং দেশীয় চিকিৎসা পদ্ধতি এক্ষেত্রে আমাদের নতুন দিশা দেখাতে পারে। এই গবেষণাপত্রে ডক্টর রাম শেপার্ড ভীনাভেণী ভারতীয় প্রাচীন হার্ড ইম্যুনিটির ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কোভিড১৯এর সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে ভারতীয় এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি আমাদের ভাবনাকে এক নতুন পথে চালিত করতে পারে। প্রচ্ছদ ও ভেতরে ব্যবহৃত তিনটি পেইন্টিং ধ্রুব চন্দ্র রায়ের আঁকা।  – সম্পাদক

 

প্রাচীনকাল থেকেই ভারতের গ্রামগুলোতে মেষপালকরা পশুদের ভাইরাসজনিত মহামারি রোধ করতে ভেষজ ঔষধের মাধ্যমে পশুর ইম্যুনিটি বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছে । মেষপালকরা টিকা দেওয়ার আগে ভাইরাসের তীব্রতা কমিয়ে দেয় আম্মা টাল্লি (স্থানীয় নাম) গাছ থেকে প্রাপ্ত পাতার রসের সাহায্যে। এই ছবিটি ২০২০ সালের মে মাসে ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের সিদ্দীপেট জেলার উরুমাদলা-রামচন্দ্রপুর গ্রাম থেকে তোলা হয়েছে। পশুর অনাক্রম্যতা অর্জনের জন্য টিকাকরণ করছেন ভীনাভেণী রাজাইয়া (বামে) এবং তার পুত্র ভীনাভেনী লক্ষ্মণ (ডানে)।

পটভূমি: করোনা ভাইরাস[] কোভিড১৯ নামে পরিচিত। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের মানুষের মধ্যে প্রথম কোভিড১৯ দেখা যায়। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং মহামারির আকার ধারণ করে।[][] প্রথম একশ দিনের মধ্যে প্রায় ১,৪৩১,৯৭৩ জন আক্রান্ত হয় সারাবিশ্বে, যাদের মধ্যে ৮২,০৯৬ জন প্রাণ হারায়।[] অভাবনীয়ভাবে এটি ২০২টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত। আজ এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে এই মারণ ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছে। এমন কোনো উপযুক্ত ওষুধ বা টিকা ঠিক এখন পর্যন্তও উদ্ভাবিত হয়নি যা কোভিড১৯এর বিরুদ্ধে পুরোপুরি লড়াই করতে সক্ষম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসকে ১ নম্বর জনশত্রু (Public Enemy)” হিসেবে ঘোষণা করে এবং মানব ইতিহাসে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বিপজ্জনক স্বাস্থ্য বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করেছে।[]

লন্ডনের কয়েকজন বিজ্ঞানী কোভিড১৯এর মৃত্যুর হার সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়ে বলেন, এটি মৌসুমী ইনফ্লুয়েঞ্জার[] থেকেও ১০২০ গুণ বেশি মারাত্মক। অনেক মহামারিবিজ্ঞানিই মনে করেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৯৫৭ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো হতে পারে।

তবে এটি ১৯১৮এর ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির মতো বিপর্যয়কর হবে বলে মনে করছেন না মহামারিবিজ্ঞানিরা।[] বিশেষজ্ঞরা ঠিক যেভাবে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তার থেকে বেশি গতিতেই এটি বেড়ে চলেছে। কারণ কোভিড১৯ এ প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে আক্রান্তের সংখ্যা ১০,০০,০০০ জনে পৌঁছাতে মাত্র ৬৭ দিন লেগেছিল। আরও ১০,০০০ জন আক্রান্ত হতে সময় লেগেছে মাত্র ১১ দিন।[] তৃতীয় ১০০,০০০ জন ৪ দিনে এবং চতুর্থ ১০০,০০০ জন আক্রান্ত হয় মাত্র ২ দিনে।[] বর্তমানে কোভিড১৯, ৫ কোটিরও বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে।[১০]  

পৃথিবীজুড়ে সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন এবং স্বেচ্ছাবিচ্ছিন্নতার মতো কঠিন জিনিসগুলো মানুষকে মানতে বাধ্য করা হচ্ছে এই সংক্রামক ব্যাধির দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে। একইভাবে এটাও বাস্তব যে, দীর্ঘ সময় ধরে লকডাউন মেনে নেয়াও সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে। এমনকি যদি আমরা এক বা দুই মাস পরে লকডাউন বন্ধ করে দিই, তবুও সারা পৃথিবীজুড়ে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ আসার অনেক বড় সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। কারণ কোনো ব্যক্তিকে ১৫ দিন বিচ্ছিন্ন করে রাখলেই যে আমরা সংক্রমিত ব্যক্তি চিহ্নিত করতে পারছি তা নয়।[১১] তাই বর্তমান কোভিড১৯ মহামারি সামাল দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক উপায় এবং নিরাময়ের পদ্ধতি বের করতে হবে আমাদের।

সুতরাং এই পর্যায়ে ভারতীয় মেষপালকদের অভিজ্ঞতা থেকে করোনভাইরাস মহামারিটির সম্ভাব্য সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করা যেতে পারে। যারা প্রাচীন কাল থেকেই দেশীয় ভেষজ জ্ঞানকে অনেকভাবে কাজে লাগিয়েছে। মহামারি সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য পটটি কাটটু (হার্ড ইম্যুনিটি) নামক এক অনন্য অনুশীলন করে আসছে মেষপালকরা। যা কিনা তাদের জনগণ, পশুপাল এবং গবাদি পশুদের সাহায্য করেছে।

ছবি: :ধ্রুব চন্দ্র রায়

হার্ড ইম্যুনিটির দেশজ ধারণাঃ প্রাচীন লোককাহিনি এবং প্রথাগত জ্ঞান থেকে জানা যায়, যখন কোনো রাখাল অচেনা বিক্রেতার কাছ থেকে বা কোনো দূরবর্তী স্থান থেকে কয়েকটি নতুন ভেড়া কিনে আনে, তখন সে ১৫ দিনের জন্য ভেড়াগুলোকে তার পুরানো ভেড়ার থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এই পৃথকীকরণটি সঙ্ঘবদ্ধ অনাক্রম্যতা বা হার্ড ইম্যুনিটির দারুণ একটি পদ্ধতি। নতুন ভেড়ার পাল ১৫ দিনের কোয়ারানটাইনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরই কেবল পুরনো পালের সাথে একসাথে রাখার অনুমতি দেয়া হয়। যদি কেউ নতুন ভেড়ার পাল পৃথকীকরণের নীতি লঙ্ঘন করার চেষ্টা করে তবে পশুর কাউন্সিল কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে। যখন ভাইরাসজনিত রোগের কোনো লক্ষণ পশুদের মধ্যে দেখা দেয় যেমনকাউপক্স, শিপপক্স, সেক্ষেত্রে এই রোগ এবং তার সংক্রমণের অনিবার্যতা দূর করতে সঙ্ঘবদ্ধ পৃথকীকরণ কখনোই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান আনতে পারে না। যদিও রাখালরা ভাইরাস শব্দটি সম্পর্কে পরিচিত নয়, কিন্তু তাদের এরকম ধারণা আছে যে, বহিরাগত কোনো এক ধরনের জীবাণু তাদের পশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। ভাইরাসের ক্ষতিকারক সংক্রমণকে প্রশমিত করার জন্য এবং পশুদের শক্তিশালী করে তোলার জন্য মেষপালকরা পটটি কাটটু নামক চিকিত্সার একটি সাধারণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা হার্ড ইম্যুনিটি নামে পরিচিত। ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এই পদ্ধতিটি এখনো প্রচলিত আছে।

হার্ড ইম্যুনিটি’র ভাবনাটি আধুনিককালে প্রথম গ্রহণ করা হয় ১৯২৩ সালে, যা পরীক্ষামূলক গবেষণার মাধ্যমে মানুষের মোট জনসংখ্যার অনাক্রম্যতার তারতম্য বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই গবেষণার মাধ্যমে হার্ড ইম্যুনিটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হিসাবে স্বীকৃতি পায়।[১২] ১৯৩০ এর দশকে এ ডাব্লিউ হেড্রিচ বসন্ত রোগ নিয়ে একটি গবেষণা করেন। গবেষণায় দেখা যায় কোনো শিশু যদি একবার  বসন্ত রোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠে, পরবর্তীতে তার মধ্যে সে রোগ ফিরে আসার প্রবণতা কমে যায়।[১৩] এই গবেষণার আলোকে বলা হয়, জনগণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গণটিকা দেয়া হলে তাকে আমাদের আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে হার্ড ইম্যুনিটি বলে, যেহেতু গণটিকার নির্দিষ্ট কোর্সটি শেষ করার পর মানুষের অনাক্রম্যতা বেড়ে যায়। 

আধুনিক বিজ্ঞান এই ধারণার বিরূদ্ধে, তারা মনে করেন হার্ড ইম্যুনিটি প্রাথমিকভাবে কোনো প্রাকৃতিক পদ্ধতি নয়, যেহেতু হার্ড ইম্যুনিটির জন্য টিকাকরণ আবশ্যক। এ পদ্ধতিতে, প্রাকৃতিক পদার্থ যেমন গাছপালা এবং অন্যান্য ওষধের দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত একটি ক্ষতিকারক ভাইরাস কোনো একটি সুস্থ পশুর শরীরে প্রবেশ করানো হয়। মেষপালকদের পর্যবেক্ষণে সেই পশুটির শরীরের ভাইরাস একের পর এক সমস্ত পশুপালকে সংক্রমিত করবে। এর ফলে প্রাণীদের ভেতরের অ্যান্টিজেনগুলো দ্রুত শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি করে কম শক্তিশালী ভাইরাসের আক্রমণে প্রতিক্রিয়া জানাবে। যার ফলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পশুগুলোর অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি পাবে।

ছবি: ধ্রুব চন্দ্র রায়

হার্ড ইম্যুনিটি অর্জনের প্রক্রিয়া ও আচার বিধিমেষপালকদের প্রধান সাধারণত দেশজ চিকিত্সা সম্বন্ধে খুব ভালো ধারণা রাখেন এবং যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও তার থাকে। তিনি ভাইরাল সংক্রমণের দ্বারা আক্রান্ত বিভিন্ন গ্রামে বাস করা পশুপালের মধ্যে একটি সমীক্ষা চালান এবং মারাত্মকভাবে সংক্রামিত পশুর সন্ধান করেন। তারপর তিনি সংক্রমিত একটি প্রাণী খুঁজে বের করেন যার অবস্থা সংকটজনক হলেও সেটি নিশ্চিতভাবে লড়াই করে বেঁচে উঠার ক্ষমতা রাখে। এই মারাত্মকভাবে সংক্রমিত পশুটিকে অন্যান্য পশুপালের সাথে রাখা হয় যাতে বাকি পশুপালের মধ্যেও রোগটি ছড়াতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে তিনি লোকের অনুরোধে অথবা টাকার বিনিময়ে সংক্রমিত ভেড়াটিকে একটি অসংক্রমিত পশুপালের কাছে নিয়ে আসেন। মেষপালক প্রধান আম্মা টাল্লি ছেট্টু (ছবি) নামক গাছের পাতা থেকে রস সংগ্রহ করেন এবং মোটা পাতার তৈরি পাত্রে সেই পাতার রস সংরক্ষণ করেন। তারপর আক্রান্ত পশুর রক্ত থেকে সিরাম/প্লাজমা সংগ্রহ করে পাতার রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করেন। একটি হীরা কাটার ধাতব যন্ত্র এবং একগুচ্ছ অস্ত্রোপচারের যন্ত্রের সহায়তায় তিনি স্বাস্থ্যকর ভেড়ার কানের প্রান্তে একটি ছোট ক্ষত তৈরি করেন এবং আক্রান্ত প্রাণীর কাছ থেকে সংগ্রহিত সিরাম/প্লাজমা ও পাতার রস জৈব সংশ্লেষণের মাধ্যমে ভাইরাস সেই ভেড়াটির দেহে প্রবেশ করান। একইভাবে সমস্ত প্রাণী ধীরে ধীরে সংক্রমিত হয়। এরপরে, পুরো পশুপালকে ১৫ থেকে ২১ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।

ছবি:  আম্মা টাল্লি গাছ (a) আম্মা টাল্লির পাতা ও বীজ (b)। ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের সিদ্দীপেট জেলার উরুমাদলা-রামচন্দ্রপুরে আম্মা টাল্লি গাছ রয়েছে।

এই কোয়ারেন্টাইন চলার সময়ে রাখালরা সংক্রমণের তীব্রতার মাত্রা বোঝার জন্য প্রতিটি ভেড়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই যত্নের সাথে পর্যবেক্ষণ করেন। যে মেষগুলোর মধ্যে মৃদু সংক্রমণ হয়েছে তাদের পশুপালের মধ্যে রাখার অনুমতি দেয়া হয়। যাদের অবস্থা সংকটজনক তাদেরকে পৃথক স্থানে রাখার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। তবে বাস্তবতা হলো আম্মা টাল্লির পাতার রস প্রয়োগের ফলে সমস্ত মেষ মৃদু সংক্রমিত হয়। ভাইরাসটি যদি প্রাকৃতিকভাবে আক্রমণ করে তবে পুরো পশুপাল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। মেষপালক প্রধানের তত্ত্বাবধানে যদি এই প্রক্রিয়টি করানো হয় তাহলে পশুদের সংক্রমণের ঝুঁকি খুব কম থাকে। ভাইরাস এবং ভেড়ার প্রতিরোধের লড়াইয়ে, ভেড়াদের সহজাত অনাক্রম্যতা এই মৃদু সংক্রমণকে রোধ করতে সক্ষম হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে নিজে থেকেই সুস্থ হয়ে ওঠে ভেড়াগুলো। মৃদু সংক্রমণ দীর্ঘ সময় ধরে কোনো প্রাণীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না। এই প্রক্রিয়ার ফলে পশুপালগুলি মহামারির ঝুঁকির মধ্যে থাকে না আর।

মেষপালকদের আদিবাসী স্বাস্থ্যসেবার এই প্রক্রিয়ার অসংখ্য উদাহরণ বর্তমানে ভারতেও লক্ষ করা যায়। আধুনিক জিনবিদ্যা সম্পর্কে ধারণা না থাকা সত্ত্বেও সংকর প্রাণী প্রজননের ব্যাপারেও তাদের অসাধারণ জ্ঞান বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ওরা সাধারণত পশুপাল থেকে একটি ভেড়া বাছাই করে বাকি পশুদের থেকে যথেষ্ট দূরত্বে রাখে। রাখাল সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি মেষ বাছাই করার এবং প্রজননের এটি অন্যতম প্রাথমিক নিয়ম। এ বিষয়টি পরোক্ষভাবে প্রমাণ করে যে জৈবিক বা জিনগত সম্পর্ক যত দূরের হবে আসন্ন মেষশাবকের স্বাস্থ্যের অবস্থা ততই শক্তিশালী এবং ততই অনাক্রম্য হবে। বর্তমান সময়ে যারা জিনবিদ্যা নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ করে আধুনিক চিকিৎসকরা তাদের এই ব্যাপারে সচেতন করেন। জিনবিদ্যা উদ্ভাবনের আগেই রাখালরা এই ধারণাটি আবিষ্কার করেছিল।

(চলবে)

তথ্যসূত্র 

১। https://www.goodrx.com/blog/what-does-covid-19-mean-who-named-it/

২। Epidemiology Group of the New Coronavirus Pneumonia Emergency Response Mechanism of the Chinese Center for Disease Control and Prevention. Epidemiological characteristics of the new Coronavirus pneumonia [published online ahead of print, 2020 February 17]. Chin J Epidemiol. (Chinese)

৩। Wang CHorby PWHayden FGet alA novel Coronavirus outbreak of global health concern. The Lancet 2020395470473.

৪। https://covid19.who.int/

৫। https://www.usnews.com/news/world/articles/2020-02-11/world-must-consider-coronavirus-public-enemy-number-one-who

৬। https://theconversation.com/how-big-will-the-coronavirus-epidemic-be-an-epidemiologist-updates-his-concerns-133133

৭। https://www.washingtonpost.com/health/coronavirus-forecasts-are-grim-its-going-to-get-worse/2020/03/11/2a177e0a-63b4-11ea-acca-80c22bbee96f_story.html

৮। https://www.technologyreview.com/2020/03/17/905244/what-is-herd-immunity-and-can-it-stop-the-coronavirus/

৯। https://economictimes.indiatimes.com/news/politics-and-nation/coronavirus-cases-in-india-live-news-latest-updates-march23/liveblog/74765889.cms

১০। https://www.worldometers.info/coronavirus/

১১। https://www.forbes.com/sites/brucelee/2020/03/18/what-percentage-have-covid-19-coronavirus-but-do-not-know-it/#45578c4f7e90
১৩। Sencer DJDull HBLangmuir ADEpidemiologic basis for eradication of measles in 1967. Public Health Rep 196782253256.

 

নাঈমা নুসরাত যূথীকা