অরাজ
প্রচ্ছদ » এনলাইটেনমেন্ট প্রসঙ্গে ফুকো

এনলাইটেনমেন্ট প্রসঙ্গে ফুকো

জাহিদুল ইসলাম

কান্টের এনলাইটেনমেন্ট রচনাটি প্রকাশিত হওয়ার দুইশত বছর পর মিশেল ফুকো পুনরায় এনলাইটেনমেন্ট কী? শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন। ফুকোর মতে এটি কান্টের তেমন উল্লেখযোগ্য রচনা না হলেও, আধুনিক দর্শনশাস্ত্র এ প্রশ্ন থেকে এখনো মুক্তি পায়নি। হেগেল, নিৎসে, ম্যাক্স ওয়েবার, হরখেইমার এবং হাবারমাস মতো দার্শনিক ও তাত্ত্বিকদের বিভিন্ন সময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তাই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রচেষ্টা হচ্ছে আধুনিক দর্শনশাস্ত্র। ফুকো নিজেও কান্টের রচনাটিকে এনলাইটেনমেন্টের যথাযথ বিশ্লেষণ হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রস্তাব করছেন না। আঠেরো শতকের শেষের দিকে যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হয়েছে তার প্রক্ষাপটেও এই বিশ্লেষণ সন্তোষজনক নয়।

মিশেল ফুকো

তবে ফুকো তার লেখায় কান্টের এনলাইটেনমেন্টকে একেবারে খারিজ না করে বরং সম্প্রসারণ করেছেন। ফুকো কান্টের এনলাইটেনমেন্টের ব্যাখায় এটিকে বর্তমানতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। এটি ভবিষ্যতের কোন পরিকল্পনা নয়। বর্তমানের সাথে সম্পর্কিত হয়ে এটি তার অবস্থানের বিকাশ ঘটায়। ব্যক্তির কাছে এটি এক ধরনের বাস্তবতা, যেহেতু এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কান্টের পূর্বের দার্শনিকদের কাজে বর্তমান গুরুত্ব পেলেও কান্টের বর্তমান বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ বর্তমানে বৈশিষ্ট্য নেতিবাচক দৃষ্টিতে ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ নিষ্ক্রমণ বা বহির্গমন। এ বের হয়ে আসার মধ্যেই রয়েছে মুক্তি। ফুকো প্রশ্ন তুলছেন কান্টের ব্যবহৃত মানবজাতি শব্দটি নিয়ে। এই শব্দটিকে কান্ট বিশেষ নাকি সার্বিক অর্থে ব্যবহার করেছেন তার একটি অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। ফুকোর মতে এনলাইটেনমেন্ট নিজেই নিজেকে ক্রিটিক করে। এর ফলে এটি স্বেচ্ছাচারী যুক্তির গোঁড়ামি থেকে নিজেকে রক্ষা করে। এনলাইটেনমেন্টের মধ্যে ক্রিটিকের জন্ম হয়েছে, এজন্য এটি ক্রিটিকের যুগ। এই ক্রিটিকের যুগ ব্যক্তির যৌক্তিকতাকবোধকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। ব্যক্তি যখন কোন কর্তৃত্বের আওতায় যুক্তিকে নিছক যুক্তির খাতিরে ব্যবহার করে তখন তা কোন সম্ভাবনা তৈরি করে না। কর্তৃত্বমূলক পরিবেশ একটি আবদ্ধ ও শৃঙ্খলিত পরিবেশ। তাই যুক্তিকে তাৎপর্য ও গুরুত্বপূর্ণ করে গড়ে তোলতেই কান্ট পাবলিক পরিসরের কথা বলেছেন। এই পরিসরে যুক্তিকে স্বাধীন ও সর্বসাধারণের নিকট পৌঁছানো সম্ভব। সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছানোর এ প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক। কারণ কান্ট এখানে যুক্তিকে ব্যবহারের বিনিময়ে রাজার আনুগত্য নিশ্চয়তা আদায় করে নিচ্ছেন। ফুকো এটিকে বলছেন একধরনের যৌক্তিক স্বৈরতন্ত্র।

এনলাইটেনমেন্ট প্রক্রিয়ার রূপরেখার মধ্য দিয়ে আধুনিকতার মনোভাব তৈরি হয়। আধুনিকতা সময় বা যুগ দ্বারা আবদ্ধ নয় বরং তা একধরনের মনোভাব। এ মনোভাব তার সমসাময়িক বাস্তবতার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। বোদলেয়ারের বরাত দিয়ে ফুকো আধুনিকতার মনোভাবের বিশ্লেষণ করেন। আধুনিকতার মনোভাব হচ্ছে সময়ের সাথে ক্ষান্তি, ঐতিহ্যের সাথে বিচ্ছেদ, নতুনত্বের অনুভূতি। আধুনিকতার মনোভাব নিজেকে চিরস্থায়ী করে রাখতে পারে না। বোদলেয়ারের ভাষায় ‘এটি তুচ্ছ,ক্ষণস্থায়ী ও আকস্মিক বিষয়’। এনলাইটেনমেন্টের মতো জটিল ঐতিহাসিক ঘটনা কিভাবে আধুনিক মনোভাব তৈরির রূপরেখা হিসেবে কাজ করেছে তাই খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন ফুকো। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ফুকো এনলাইটেনমেন্টকে ইতিবাচকভাবে ও নেতিবাচকভাবে তার বৈশিষ্ট্যকে পর্যালোচনা করেছেন। এনলাইটেনমেন্ট যেহেতু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক, সাংস্কৃতিক ঘটনাবলির উপর নির্ভরশীল এবং অনেকাংশে ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া দ্বারা তা নির্ণীত, তাই এটির পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থানের সুযোগ নেই। হয় এটিকে গ্রহণ করে যৌক্তিক ঐতিহ্যের মধ্যে থাকা নতুবা এটিকে বর্জন করে যৌক্তিক ঐতিহ্য থেকে মুক্তি লাভ করা। এনলাইটেনমেন্টের মধ্যে ভালো,মন্দের বিচার করার অর্থই হচ্ছে দ্বান্দ্বিকতা তৈরি করা যার মধ্যে মুক্তির পথ নেই। ফুকোর মতে এটি এনলাইটেনমেন্টের ‘ব্ল্যাকমেইল’যা বর্জনযোগ্য। এটি শুধু এনলাইটেনমেন্টকে ব্ল্যাকমেইল করে না বরং বুদ্ধিমত্তাকেও ব্ল্যাকমেইল করে। ফুকো এজন্য এটি থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছেন। ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের তাত্ত্বিকদের লক্ষ্য করেই এনলাইটেনমেন্ট সম্পর্কিত ফুকোর এ অবস্থান। দেখা যাচ্ছে ফুকো খুব জোরালোভাবে এনলাইটেনমেন্টকে পর্যালোচনা করেছেন। এনলাইটেনমেন্টের পক্ষে তার অবস্থানকে দৃঢ় এবং পরিষ্কার করার জন্য এনলাইটেনমেন্ট ও মানবতাবাদের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশেষত ফ্রান্সে এ বিষয়টিকে এক করে দেখা হতো। ফুকোর মতে এই দুইটি বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। এনলাইটেনমেন্ট জটিল ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি বা অনেকগুলো ঘটনার সমষ্টিগত রূপ। মানবতাবাদ বিমূর্ত এবং এনলাইটেনমেন্ট বাস্তব অবস্থান। মানবতাবাদ মূল্যবোধ সংক্রান্ত। ইউরোপে মানবতাবাদ ব্যাপক এবং বহুরূপী অর্থে ব্যবহৃত হয়। অস্তিবাদী দর্শন নিজেকে মানবতাবাদী হিসেবে দাবি করত, এমনকি স্টালিনবাদও একই দাবি করত। যার ফলে মানবতাবাদের মূল্যবোধও পরিবর্তিত হয়েছে। এর বিস্তৃতি ও সংবেদনশীলতার কারণে দার্শনিক গুরুত্ব অপ্রাসঙ্গিক।

ফুকো তার রচনায় একদিকে নিজেকে কান্টিয়ান ক্রিটিকের স্পৃহার সাথে সংযুক্ত করেন অন্যদিকে তিনি নিজেই আধুনিক জ্ঞান এবং ক্ষমতার একজন প্রভাবশালী সমালোচক। ফুকোর তার প্রধান কাজেগুলোর মধ্যে দেখিয়েছেন যুক্তি এবং সত্যের ভিত্তি কখনো নিরপেক্ষ ছিলো না বরং তা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতা দ্বারা প্রভাবিত। হাবারমাস কান্টের প্রবন্ধ সম্পর্কে ফুকোর দৃষ্টিভঙ্গির স্ববিরোধীতার প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধন করেছেন। ফুকো কান্টকে এমন একজন দার্শনিক হিসেবে আবিষ্কার করেছেন যিনি দর্শনকে বর্তমানের পর্যালোচনা হিসেবে পর্যবসিত করেছেন। কান্টের দার্শনিক অনুসন্ধান বর্তমানের সাথে সংযুক্ত। অর্থাৎ বর্তমান পরিবেশের মধ্যেই জ্ঞানলাভ সম্ভব। অন্যদিকে ফুকোর কাজগুলোই বর্তমান জ্ঞান ক্ষমতাকে চূড়ান্ত ও সূক্ষ্মভাবে সমালোচনা করেছে। ফুকোর জেলখানা বা যৌনতার কুলুজি সংক্রান্ত (Genealogical) কাজগুলোতে জ্ঞান, ক্ষমতা, সত্য সম্পর্কে গভীর সমালোচনার উপস্থিতি রয়েছে। মানবিক বিজ্ঞান ও আধুনিক ক্ষমতা সম্পর্কিত ফুকোর চিন্তাভাবনা দর্শন এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ও প্রভাবশালী। ফুকো আধুনিক জ্ঞান/ক্ষমতাকে সর্বাত্মকভাবে সমালোচনা করেছেন। হাবরাম তাই প্রশ্ন করেছেন ‘এনলাইটেনমেন্টের ঐতিহ্যের সাথে ফুকোর আত্ম-বোঝাপড়া কিভাবে সম্পর্কিত হয়, যেহেতু তিনি আধুনিক জ্ঞানকাঠামোর একজন চূড়ান্ত সমালোচক? মানবতাবাদের প্রতি উদাসীন ফুকো শেষ পর্যন্ত এনলাইটেনমেন্টের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং এ দুটি বিষয়কে জোরালাভাবে পৃথক করেন। ফুকো এ দুটি প্রত্যয়কে আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করলেও এই দুটির মধ্যে সংযোগের জন্য একটি বাদ দিয়ে অন্যটি গ্রহণ করা বিভ্রান্তিকর ও স্ববিরোধী।

ফুকো যেসব যুক্তির ভিত্তিতে মানবতাবাদকে খারিজ করছেন সেসব যুক্তির ভিত্তিতে এনলাইটেনমেন্টও খারিজ হয়ে যায়। কারণ মানবতাবাদ এবং এনলাইটেনমেন্ট উভয়কেই বিস্তৃতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ইউরোপীয় মানবতাদ ও এনলাইটেনমেন্ট উভয় বিষয়ই ইউরোপীয় সভ্যকরণ প্রকল্পকে ত্বরান্বিত করে। এই পর্যায়ে এসে এনলাইটেনমেন্ট ও মানবতাবাদের ঐতিহাসিক চেতনার নীতিসমূহ একইরূপ ধারণ করেছে। এনলাইটেনমেন্ট এবং মানবতাবাদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা বিস্তৃত, বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে পর্যালোচনা করা যায়। ফুকো এই দুটি প্রত্যয়কে ভিন্ন দৃষ্টিতে সংজ্ঞায়িত করে এদের সমজাতীয়তাকে অস্বীকার করলেও পুরুষতান্ত্রিক বা ঔপনিবেশিক বাস্তবতায় এই দুটি বিষয় নিজেদের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করেছে।

ফুকো মানবতাবাদের যেসব বিচিত্র উদাহরণ দিয়েছেন তা এনলাইটেনমেন্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে বিকাশ ঘটেছে। এনলাইটেনমেন্ট প্রক্রিয়ার মধ্যেই অস্তিত্ববাদ, স্ট্যালিনবাদের বিকাশ ঘটে। এনলাইটেনমেন্টকে এসব থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। তাই মানবতাবাদ নিজেই এনলাইটেনমেন্টের অনুসঙ্গ।

এনলাইটেনমেন্ট প্রক্রিয়া নিজেই মানবকেন্দ্রিক। ইউরোপের এনলাইটেনমেন্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে যেসব প্রভাবশালী দার্শনিকদের জন্ম দিয়েছে তাদের সবার চিন্তাভাবনা মানবকেন্দ্রিক। মার্কস,সার্ত্রে,নিৎসের চিন্তাভাবনার লক্ষ্য ছিলো মানুষকে কর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে কর্তৃত্বমুক্ত করা। যার মাধ্যমে মানুষকে নিজেই নিজের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠবে। এনলাইটেনমেন্টের এই মানবকেন্দ্রিকতা বিচিত্রভাবে কখনো পরিবেশ, কখনো নারী এবং এর বাইরের অপরাপর মানুষের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে। এনলাইটেনমেন্ট মানবকেন্দ্রিকতাকে গুরুত্ব দিয়েছে এবং মানবকেন্দ্রিকতা এনলাইটেনমেন্টকে টিকিয়ে রেখেছে। এনলাইটেনমেন্টের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মানবকেন্দ্রিকতা বা মানবতাবাদের প্রচার হয়েছে। তাই মানবকেন্দ্রিকতা থেকে এটিকে সহজেই বিচ্ছিন্ন করা যায়না। এনলাইটেনমেন্টের জ্ঞানতত্ত্ব সভ্যকরণ ও উপনিবেশায়ন প্রকল্পের মধ্যে যে যুক্তি পাওয়া যায় তা হচ্ছে মানবকেন্দ্রিক।

ফুকোর লক্ষ্য ছিলো এনলাইটেনমেন্টের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ন্যায্যতা অন্বেষণ। বাস্তবিক এনলাইটেনমেন্ট ইউরোপীয় সমাজের জন্য অনেক প্রগতি ও নতুনত্ব নিয়ে এসেছিল। যার ফলে ইউরোপ নিজেকে আধুনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। কিন্তু এনলাইটেনমেন্টের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে যে আধিপত্যশীল অবস্থান ছিলো,তা আমাদের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। এ আধিপত্যশীল প্রক্রিয়া শুধুমাত্র ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে নয় বরং স্বয়ং ইউরোপে প্রভাব বিস্তার করে এ বিষয়টি ফুকো সজ্ঞানে এড়িয়ে গেছেন। তাই এনলাইটেনমেন্টকে ক্রিটিক করে এর কোন কোন সীমারেখাকে লঙ্ঘন করতে হবে তাদের দিকে ফুকো দৃষ্টিপাত করেননি।

তথ্যসূত্র
১)Edited by Paul Rainbow, The Foucault Reader, Pantheon Books,New York,1984 [Michael Foucault, What is Enlightenment?Translated by Catherine Porter, Page 32 ] ২)Ibid, Page 37
৩)Ibid, Page 39
৪)Ibid, Page 42
৫)David R. Hiley, Foucault and the Question of Enlightenment,Page 64 Derived from Internet https://www.google.com/url?sa=t&source=web&rct=j&url=http://journals.sagepub.com/doi/abs/10.1177/019145378501100103&ved=2ahUKEwiLht_M8bPsAhWGzTgGHZ0TCv0QFjAAegQIBBAC&usg=AOvVaw3p_xiGO_fuoZF8nTdEOJX7

জাহিদুল ইসলাম

জাহিদুল ইসলাম। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি অধ্যয়ন বিভাগে অধ্যয়নরত। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজ, সাহিত্য, দর্শন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আগ্রহী। জাহিদুল ইসলামের জন্ম সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায়। পরস্পর' 'রাষ্ট্রচিন্তা' সহ বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করে থাকেন। যোগাযোগ: imjahid9@gmail.com