অরাজ
প্রচ্ছদ » অরুন্ধতী রায়।। দু’টি ষড়যন্ত্র এবং একটি শবদাহ

অরুন্ধতী রায়।। দু’টি ষড়যন্ত্র এবং একটি শবদাহ

অনুবাদ: লুবনা সুলতানা

দীপাবলি যত ঘনিয়ে আসছে হিন্দু ধর্মাবলম্বিরা তত ঘটা করে প্রস্তুত হচ্ছে ভগবান রামের বিজয়ী বেশে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উদযাপন করতে (এবং তার চমকপ্রদ সেই মন্দিরের জন্য যা নির্মিত হচ্ছে অযোধ্যায়)। আর অবশিষ্ট  আমাদের জন্য এই মৌসুমে আছে ভারতীয় গণতন্ত্রের ধারাবাহিক জয় উদযাপনের তুষ্টি। একটি চাঞ্চল্যকর শবদাহের ব্রেকিং নিউজের মধ্যখানে বিরাট এক ষড়যন্ত্রকে ঢেকে দেয়া এবং একেবারে নতুন কাণ্ডের শুরুয়াদে আমরা নিজেদের নিয়ে, আমাদের সংস্কৃতি এবং সভ্যতার আদি ও আধুনিক মূল্যবোধগুলি নিয়ে কি গর্ববোধ না করে পারি?

অরুন্ধতী রায়

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে, উত্তর প্রদেশের হাথরাস গ্রামে ১৯ বছর বয়সী এক দলিত মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়। মেয়েটিকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে রাখা হয় মৃত্যুর উদ্দ্যেশ্যে। আর এতে জড়িত ছিল গ্রামেরই উঁচু জাতের লোকেরা। তার পরিবার ছিলো গ্রামের ১৫টি দলিত পরিবারের মধ্যে একটি, যেখানে ৬০০ পরিবারের বেশিরভাই ব্রাহ্মণ এবং ঠাকুর।  সেই গেরুয়া আলখাল্লাধারী উত্তর প্রদেশের মুখ্য মন্ত্রী অজয় সিং বিশতের মতো একই জাত, যিনি নিজেকে যোগী আদিত্যনাথ নামে অভিহিত করেন। (শোনা যায়, অদূর ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদিকে প্রতিস্থাপন করতে তাকে প্রস্তুত করা হচ্ছে।)

কয়েকদিনের জন্য মেয়েটিকে তার আক্রমণকারীরা অনুসরণ করে এবং ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। সাহায্য করার মতো কেউ তার পাশে ছিল না। তাকে কেউ রক্ষা করেনি। তাই সে ঘরেই থাকতো এবং বাইরে খুব একটা বের হতো না। সে এবং তার পরিবার জানতো তাদের সাথে কি ঘটবে। কিন্তু সতর্কতা কোনো উপকারে আসেনি। তার মা মেয়ের রক্তাক্ত শরীর খুঁজে পান মাঠে, যেখানে সে গিয়েছিলো গরু চরাতে। তার জিহবা ছেঁড়া, মেরুদণ্ড ভাঙ্গা, চলনশক্তিহীন নিথর শরীর পড়ে আছে।

মেয়েটি দুই সপ্তাহ বেঁচে থাকে, প্রথমে আলীগড়ের একটি হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে, তার অবস্থা আরো সংকাটাপন্ন হলে দিল্লির একটি হাসপাতালে। ২৯শে সেপ্টেম্বরের রাতে সে মারা যায়। উত্তর প্রদেশের পুলিশ যারা হেফাজতে প্রায় ৪শ হত্যাকাণ্ডের (যা সর্বভারতীয় পুলিশি জিম্মায় সংগঠিত ১৭শ হত্যাকাণ্ডের এক চতুর্থাংশ) জন্য কুখ্যাত, রাতারাতি মেয়েটির মৃতদেহ সরিয়ে  নিয়ে গ্রামের একদম উপকন্ঠে চলে যায়। মাকে মেয়ের শেষবিদায় এমনকি মুখটিও একটিবারের মতো দেখতে দেয়া হয়নি। এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়া প্রিয় মানুষটির জন্য তার স্বজনদের শেষকৃত্য করার মর্যাদাকেও অস্বীকার করা হয়। অতঃপর বন্দী করে রাখা হয় মানসিকভাবে আহত পরিবারটিকে। এমনকি যে মরদেহটি দাহ করা হয়েছে তা আদৌ তাদের সন্তানের কিনা, জানাতে অস্বীকার পর্যন্ত করা হয়।

তাড়াহুড়ো করে তৈরি একটি চিতায় খুন হওয়া মেয়েটির ভাঙ্গাচোরা দেহটাকে এলিয়ে দেয়া হয় এবং পুলিশের খাকি উর্দির একটা দেয়ালের আড়াল হতে ধোঁয়ার কুণ্ডলী রাতের আকাশে মিশে যেতে থাকে। মেয়েটির পুরো পরিবার আড়ষ্ট, স্পষ্টতই মিডিয়ার মনোযোগী শ্যেন দৃষ্টিতে আতঙ্কিত। আতঙ্কিত কারণ তারা খুব ভালো করে জানতেন যখন তাদের উপর থেকে এই আলো ঝাপসা হয়ে যাবে তখন এই দৃষ্টি আকর্ষণের দোষেও তাদের শাস্তি দেয়া হবে।

যদি তারা কোনভাবে বেঁচে যায়, তারা ফিরে যাবে তাদের অভ্যস্ত জীবন যাপনে। সেই মধ্যযুগীয় বর্ণহিংসায় বিধ্বস্ত গ্রামের মধ্যযুগীয় নিষ্ঠুরতা ও ক্রোধের আক্রোশে ভরপুর জীবনে, যেখানে তারা অচ্ছুত এবং উপ-মানব হিসাবে বিবেচিত।

শবদাহের একদিন পরে, মৃতদেহটি নিরাপদে হাপিস করা গেছে এই আত্মবিশ্বাসে পুলিশ ঘোষণা করে যে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়নি, কেবল হত্যা করা হয়েছে। কেবল হত্যা। লক্ষ্যণীয় যে, এর মাধ্যমে একটি কার্যকরী পদ্ধতির সূচনা হয় যেখানে খোদ বর্ণপ্রথাকে বর্ণবাদী নৃশংসতা থেকে দ্রুত ছেঁটে ফেলা হয়। এই বিদ্বেষপরায়ণ জাতিবর্ণগত নৃশংসতাকে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সাধারণ অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং অনুমেয় যে, আদালত, হাসপাতালের নথি এবং মূলধারার মিডিয়া  এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে।

অন্য ভাবে বললে, আমাদের সমাজকে মুক্তি দেয়া, আমাদের সংস্কৃতি ও সামাজিক অভ্যাসকে দায়মুক্তি দেয়া। সময়ে সময়ে এটা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, সবচেয়ে স্পষ্টভাবে, ২০০৬ সালে খাইরলঞ্জিতে সুরেখা ভোটমাঙ্গে  এবং তার দুই শিশুর হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতায়।

ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিশ্রুতি হিসাবে আমাদের দেশকে তার গৌরবময় অতীতে ফিরিয়ে নিতে আমাদের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে আগামী নির্বাচনে যদি পারেন, দয়া করে অজয় সিং বিশত’কে ভোট দিতে ভুলবেন না। যদি তাকে না দেন, যেনো মুসলমানকে কটাক্ষ করেন বা দলিতকে ঘৃণা করেন, এমন যেকোনো এক রাজনীতিবিদকে জয়ী করুন। গণপিটুনীতে হত্যার আপলোডকৃত ভিডিওটিতে “লাইক” দিতে ভুলবেন না এবং আপনার প্রিয়, বিষেদগার করা সংবাদ উপস্থাপককে দেখতে থাকুন, কেননা তিনিই আমাদের সম্মিলিত বিবেকের রক্ষক।

এছাড়াও, দয়া করে কৃতজ্ঞ হতে ভুলবেন না যে আমরা এখনো ভোট দিতে পারি, আমরা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে বাস করি যা কিনা আমাদের প্রতিবেশীদের মতো নয়, যাদেরকে আমরা “ব্যর্থ রাষ্ট্র” বলে অভিহিত করতে পছন্দ করি, আমাদের রয়েছে নিরপেক্ষ আদালত যা আইনের শাসন পরিচালনা করে।

৩০ শে সেপ্টেম্বর সকালে, হাথরাস গ্রামের বাইরে ঘটে যাওয়া এই লজ্জাজনক ও ভয়ঙ্কর শবদাহের মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর একটি আদালত এমন নিরপেক্ষতা ও ন্যায়পরায়ণতার প্রকাণ্ড প্রদর্শনী আমাদের সামনে মেলে ধরে।

২৮ বছর সতর্কতার সাথে বিবেচনার পরে এই আদালত ২০০২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন এমন ৩২ জন অভিযুক্তকে খালাস করে দেয়, এটি এমন একটি ঘটনা যা আধুনিক ভারতের ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছিলো। খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন একজন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, একজন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী এবং একজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। যার ফলে এই দাঁড়ায় যে বাবরি মসজিদ কেউ ভাঙ্গেনি।  অন্ততপক্ষে আইননুযায়ী তো নয়ই। সম্ভবত, মসজিদটি স্বেচ্ছায় ভেঙ্গে পড়ে। এতকিছু ঘটার বহু বছর আগেই, গেরুয়া স্কার্ফ পরিহিত নিজেদেরকে ভক্ত বলে অভিহিত করা গুন্ডাদের সম্মিলিত দুরভিসন্ধির নিচে চূর্ণবিচূর্ণ হতে, নিজেকে ধুলোয় গুড়িয়ে দিতে, মসজিদটি একটি দিন নির্ধারণ করে। আর দিনটি ছিল ৬ই ডিসেম্বর, বাবাসাহেব অম্বেডকরের মৃত্যুবার্ষিকী।

ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায় মসজিদের গম্বুজ ভাঙছে লোকদের যেসব ছবি এবং ভিডিও আমরা দেখেছি, প্রত্যক্ষদর্শীদের যেসব সাক্ষ্য আমরা পড়েছি এবং শুনেছি, ঘটনার পরবর্তী মাসগুলোতে মিডিয়া বুঁদ ছিলো যেসব সংবাদে তা নিতান্তই আমাদের জল্পনা-কল্পনা। এল কে আদভানির রথযাত্রার সময়, যখন তিনি ভারতের এ মোড় থেকে সে মোড়ে ভ্রমণ করছিলেন খোলা ট্রাকে করে, শহরের রাস্তা বন্ধ রেখে বিশাল জনতার উদ্দ্যেশ্যে বক্তৃতা রাখছিলেন, সাচ্চা হিন্দুদের উপদেশ দিচ্ছেলেন, তারা যেনো অযোধ্যায় ঠিক সেখানে মিলিত হয় যেখানে মসজিদটি ছিলো এবং অংশ নেয় রাম-মন্দির নির্মাণে– এসবকিছু বাস্তবে আসলে ঘটেনি।

তার যাত্রা অনুসরণ করে যে মৃত্যু ও ধংসযজ্ঞের শুরু হয়, সেসব কিছুও ঘটেনি। কেউ জপেনি “এক ধাক্কা অউর দো, বাবরি মাসজিদ তোড় দো”। দেশব্যাপী, সম্মিলিতভাবে আমরা একটা হ্যালুসিনেশন অভিজ্ঞতা পেলাম। কি এমন কি খেয়েছিলাম আমরা? মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো থেকে আমাদের তলব করা হচ্ছে না কেন? কেবল বলিউডের লোকজনদের কেন তলব করা হচ্ছে? আমরা সবাই কি আইনের দৃষ্টিতে সমান নই?

কেন মসজিদটি ধ্বংসের কোন পরিকল্পনা ছিলো না সে সম্পর্কে বিশেষ আদালতের বিচারক ২,৩০০ পৃষ্ঠার বিশদ রায় লিখেছেন। আপনাকে স্বীকার করতেই হবে, এটি একটি কৃতিত্ব– পরিকল্পনার অভাব সম্পর্কে ২,৩০০ পৃষ্ঠা। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, কোনো প্রমাণ নেই যা দ্বারা বলা যায় যে অভিযুক্তরা “একটি কক্ষে” মিলিত হয়ে এই ধ্বংসের পরিকল্পনা করেন। সম্ভবত এর কারণ এই যে, পরিকল্পনাটি হয়েছিলো কোনো এক ঘরের বাইরে, আমাদের রাজপথগুলিতে, জনসভায়, আমাদের টিভির পর্দায় যাতে করে আমরা সবাই দেখতে পারি এবং অংশীদার হতে পারি? অথবা,ঐ মাদকই বোধহয় আমাদের মধ্যে এখন এমন চিন্তার জন্ম দিচ্ছে?

যাই হোক, বাবরি মসজিদের ষড়যন্ত্র আপাতত থাক। তবে আরও একটি আছে যা “চলছে” এবং “ট্রেন্ডিং”। ২০২০ সালের দিল্লি হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র যেখানে উত্তরপূর্ব দিল্লির শ্রমজীবী অধ্যুষিত পাড়াগুলোয় ৫৩ জন মারা যায় (তন্মধ্যে ৪০ জন মুসলিম) এবং ৫৮১ জন আহত হয়। মসজিদ, কবরস্থান এবং মাদ্রাসাগুলিকে বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছিলো। যেসব ঘরবাড়ি, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আগুনে পুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিলো তার বেশিরভাগ মুসলমানদের।

এই ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রে দিল্লি পুলিশের চার্জশিট কয়েক হাজার পৃষ্ঠায় চলে যায়, এমনকি কিছু লোকের একটি টেবিল ঘিরে বসে থাকার ছবিও আছে– আজ্ঞে হ্যা! একটি “কক্ষে”, একটি অফিসের নিচতলায়– ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আপনি তাদের অভিব্যক্তি দেখে স্পষ্ট করে বলতে পারবেন যে তারা ষড়যন্ত্র করছে। তীর চিহ্ন দিয়ে চিহ্ণিত করে এই অভিযুক্তদের নাম পরিচয় চার্জশীটে তুলে ধরা হয়েছে।ভয়াবহ ব্যাপার।

বাবরি মসজিদের গম্বুজের উপর স্লেজ-হাতুড়িওয়ালা লোকদের থেকেও যেন বেশি উদ্বেগজনক! ঐ টেবিল ঘিরে বসা কয়েকজন ইতিমধ্যে জেলে। বাকিরাও সম্ভবত দ্রুত যাবেন। গ্রেফতার করতে মাত্র কয়েক মাস লেগেছিলো। বেকসুর খালাস পেতে কয়েক বছর লাগতে পারে, বাবরির রায়ের পথ ধরে আগায় যদি, তাহলে হয়তো ২৮ বছর, কে জানে।

বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন– ইউএপিএ’র আওতায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর অধীনে সবই অপরাধ। এমনকি দেশ বিরোধী চিন্তা-ভাবনাও। নিজকে বেকসুর প্রমাণ করার দায় আপনার উপরেই। আমি যতোই এই আইন এবং এর পুলিশি প্রক্রিয়া সম্পর্কে পড়ছি ততোই মনে হচ্ছে, একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে পাগলদের একটি কমিটির সামনে তার বিচক্ষণতা প্রমাণ করতে বলা হচ্ছে।

আমাদের বিশ্বাস করতে বলা হয় যে, দিল্লির ষড়যন্ত্রটি মুসলিম ছাত্র ও অ্যাক্টিভিস্ট, গান্ধীবাদী, আরবান-নকশাল এবং বামপন্থী দ্বারা তৈরি হয়েছিল যারা সবাই এনপিআর, এনআরসি, সিএএ বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। তারা বিশ্বাস করতো যে এগুলো সম্মিলিতভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের এবং ভারতের দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাদের কিনা “উত্তরাধিকারে কাগজপত্র” নেই তাদের পায়ের নিচের জমি কেড়ে নিবে।  আমি নিজেও এটা বিশ্বাস করি। এবং আমি বিশ্বাস করি যে সরকার যদি এই প্রকল্প আগানোর সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এই প্রতিবাদ আবার শুরু হবে। এটাই হওয়া উচিত।

পুলিশের মতে, দিল্লি ষড়যন্ত্রের পেছনের কারণ হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেব্রুয়ারিতে ভারত সফরের সময় সহিংসতা প্ররোচিত করে এবং একটি রক্তাক্ত সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব তৈরি করে ভারত সরকারকে বিব্রত করা। চার্জশিটে প্রকাশিত যেসব অমুসলিমদের নাম রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনকে “ধর্মনিরপেক্ষতার রঙ” দেয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। যেসব হাজার হাজার মুসলিম নারী নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থায়ীভাবে এবং আন্দোলন করছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, আন্দোলনকারীদের “জেন্ডার কভার” এর জন্য তাদেরকে “আনা” হয়েছে।

ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রকাশ্য পাঠ ও পতাকা উত্তোলন, এবং কবিতা, সঙ্গীত ও প্রেমের প্রসার এ সমস্ত যা এই আন্দোলনের পরিচয় সনাক্ত করে, তা খারিজ করে দেয়া হয় এই বলে যে, এসব কুটিল প্রতারণার জাল ক্ষতিকারক উদ্দ্যেশ্য হাসিলের জন্য। অন্যভাবে বললে, আন্দোলনের মূল অংশটি জিহাদি (এবং পুরুষ) – বাদবাকি সব অলংকরণ ও সাজসজ্জা।

ড. উমর খালিদ, তরুণ শিক্ষানবিশ, যাকে আমি ভালো করে চিনি, যিনি গণমাধ্যমের ভুয়া সংবাদের দ্বারা নিগৃহিত হয়েছিলেন, নির্যাতিত হয়েছিলেন, পুলিশের মতে তিনি একজন মুখ্য ষড়যন্ত্রকারী। পুলিশের মতে তার বিরুদ্ধে জোগাড় করা প্রমাণাদি রয়েছে ১০ লাখ পৃষ্ঠা জুড়ে। (মোদী ঘোষিত বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর কোভিড-১৯ লকডাউনের পরে, এই সেই একই সরকার যারা জানিয়েছিল, তাদের কাছে ১ কোটি শ্রমিকের কোন তথ্য নেই। কোনো ধারণা নেই নিজ গ্রামের পথে কয়েকশ কিলোমিটার থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার হাঁটতে গিয়ে কতজন মারা গেছে, কতজন ক্ষুধার্ত ছিলো, কতোজন অসুস্থ হয়ে পড়ে।)

উমর খালিদের বিরুদ্ধে এক মিলিয়ন পৃষ্ঠার প্রমাণে অন্তর্ভুক্ত হয়নি জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ। অথচ ঐ জায়টিই ছিল কথিত চক্রান্ত এবং উস্কানির স্থান।২৫ শে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই সেই ফুটেজ সংরক্ষণ করার জন্য দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করেছিলো অ্যাক্টিভিস্টরা। তখনও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছিলো। নির্বিচারে তা মুছে ফেলা হয়েছে।

উমর খালিদ বর্তমানে আরো কয়েক শতাধিক মুসলমানের সাথে জেলে আছেন, যারা ইউএপিএ’র আওয়তার পাশাপাশি হত্যার, হত্যার উদ্দ্যেশ্যে এবং দাঙ্গার অভিযোগে অভিযুক্ত। উকিল এবং আদালতের কতো জন্ম লাগবে এই এক মিলিয়ন পৃষ্ঠার “প্রমাণ” দিয়ে কাজ করতে?

উমর খালিদ

যেভাবে বাবরি মসজিদ নিজেকে ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে হয় ঠিক সেভাবে ২০২০ সালের দিল্লি হত্যাকাণ্ডের পুলিশি ভাষ্যে মুসলমানরা নিজেকে হত্যা করার, নিজেদের মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়ার, ঘর-বাড়ি ধ্বংস করার, নিজেদের সন্তানদের অনাথ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে কেবলমাত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখানোর জন্য যে তারা ভারতে এক ভয়াবহ অবস্থা অতিক্রান্ত করছে।

তাদের মামলাটি আরো জোরদার করার জন্য চার্জশীটে কয়েক’শ পৃষ্ঠার হোয়াটস অ্যাপ কনভারসেশন সংযুক্ত করে দেয়া হয়। এসব কথোপোকথনে শিক্ষার্থী ও অ্যাক্টিভিস্ট এবং তাদের সমর্থক গোষ্ঠী দিল্লিতে আন্দোলনের জায়গা এবং শান্তিপূর্ণ গণঅবস্থান নিয়ে সমর্থন ও সমন্বয়ের চেষ্টা করছিলো। এসব কথোপকথন আবার যারা নিজেদের “কট্টর হিন্দু একতা” বা “কট্টর হিন্দু ঐক্য” নামে অভিহিত করেন তাদের হোয়াটস অ্যাপ কথোপকথন থেকে খুব বেশি ভিন্ন কিছু নয়। এসব কথোপকথনে তারা প্রকৃতপক্ষে মুসলমান হত্যায় গর্ববোধ করেন এবং প্রকাশ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতাদের প্রশংসা করেন। এটা একটা ভিন্ন চার্জশীটের অংশ।

ছাত্র-অ্যাক্টিভিস্টদের কথোপকথনের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে তারুণ্যদীপ্ত সেই স্পৃহা ও লক্ষ্য যা উৎসারিত ন্যায়পরায়ণ ক্ষোভ থেকে এবং চলে আপন মর্জিমাফিক। সেগুলো পড়লে প্রবলভাবে শক্তি পাওয়া যায়। এগুলো আপনাকে নিয়ে যায় সেই কোভিড পূর্ব সময়ে যেখানে নতুন প্রজন্মকে নিজে নিজে গড়ে উঠতে দেখার উত্তেজনা কাজ করে। বারবার, অভিজ্ঞ অ্যাক্টিভিস্টরা তাদেরকে শান্ত হতে ও শান্ত থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সতর্ক করতে উদ্যত হোন। তারাও তুচ্ছ তুচ্ছ প্রশ্নে তর্ক-বিতর্ক জুড়ে দেন, যেমনটা অ্যাক্টিভিস্টরাও করেন। তবে এটা গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠারই অংশ।

কথোপকথনটির বিতর্কের মূল অংশ হচ্ছে, শাহীনবাগের হাজার হাজার নারীর আন্দোলনের সেই অভূতপূর্ব সাফল্য, যারা কিনা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে একসঙ্গে থেকেছেন, শীতের ভেতরে মোকাবিলা করেছেন কনকনে ঠান্ডা,  ট্র্যাফিক ব্লক করে সড়ক অবরোধ করেছেন, হাঙ্গামা বাধিয়েছেন, কিন্তু বিপুল দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন নিজেদের দিকে, এই আন্দোলনের দিকে।

শাহীনবাগের দাদি, বিলকিস বানু, ২০২০ সালের টাইম ম্যাগাজিনের সবচেয়ে প্রতাপশালী ব্যক্তিদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন। (২০০২ সালে যখন নরেন্দ্র মোদী গুজরাট রাজ্যের মূখ্য মন্ত্রী ছিলেন তখন সেই রাজ্যে মুসলিম বিরোধী সুসংগঠিত হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে ফেরা ১৯ বছর বয়সী আরেক বিলকিস বানুর সাথে তাকে গুলিয়ে ফেলবেন না। তিনি একটি হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী যেখানে উন্মত্ত হিন্দু পাণ্ডারা তার তিন বছর বয়সী মেয়েসহ পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে হত্যা করে। তিনি গর্ভবর্তী ছিলেন এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হোন। এইতো।)

দিল্লির অ্যাক্টিভিস্টদের হোয়াটস অ্যাপের বকবকানি জনতাকে উত্তর পূর্ব দিল্লিতে “চাক্কা জ্যাম” মানে রাস্তা অবরোধ করবে কিনা- এমন প্রশ্নে দুই ভাগে বিভক্ত করে দেয়। চাক্কা জ্যামের পরিকল্পনাটি নতুন কিছু নয়- কৃষকেরা এটি আগেও অনেকবার করেছেন। এই মুহুর্তে তারা পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতে এটা করছেন। সম্প্রতি পাশ করা কৃষি বিল যা ভারতীয় কৃষিকে কর্পোরেটীকরণ করে ক্ষুদ্র কৃষকদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দেয় তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জারি রেখেছেন তারা।

দিল্লি আন্দোলনের ক্ষেত্রে, ঐ চ্যাট গ্রুপে কয়েকজন অ্যাক্টিভিস্ট বিতর্ক করছিলেন যে রাস্তা বন্ধ করে দেয়াটা হিতে বিপরীত হবে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে দিল্লির নির্বাচনে বিজেপি নেতাদের ভরাডুবির পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি ক্ষোভ ঐসব অঞ্চলে প্রকাশ্য হুমকির পরিবেশ তৈরি করতে পারে এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের আশঙ্কা, রাস্তা অবরোধ তাদের ক্ষেপিয়ে তুলবে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপর পরিচালিত করবে সহিংসতা। তারা জানতেন যে কৃষক, গুজ্জার এমনকি দলিতদের এমনটা করা এক জিনিস। আর মুসলমানের ক্ষেত্রে একদম অন্য।এই হলো আজকের ভারতের বাস্তবতা।

আবার কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়েছেন, যদি রাস্তা অবরোধ না হয় এবং শহরের সবার মনোযোগ আকর্ষণে বাধ্য করা না হয় তবে প্রতিবাদকারীদের একপেশে করে অবহেলা করা হবে। এই মাফিক, কতক প্রতিবাদ স্থানে রাস্তা আবরোধ করা হয়েছে। ঠিক যেমন অনুমান করা হয়েছিলো, এই  অবরোধ উন্মত্ত হিন্দু পাণ্ডাদের অস্ত্র ও হন্তারক মন্ত্র দিয়ে সশস্ত্র হবার সুযোগ করে দেয়, যা তারা এতদিন খুঁজছিলো।

এরপরের কয়েকদিনে তারা যে বর্বরতার প্রকাশ ঘটায় তা আমাদের শ্বাস রুদ্ধ করে দেয়। ভিডিওতে দেখা যায় প্রকাশ্যে তারা পুলিশের পিঠচাপড়ানি ও সমর্থন পাচ্ছে। মুসলিমরাও পাল্টা লড়ে যায়। উভয়পক্ষেই প্রাণহানি ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু পুরোপুরি অসমভাবে। এখানে সমতার হিসেব নিকেশ হয় না। এই সহিংসতাকে উসকিয়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো। অবিশ্বাস্যভাবে আমরা দেখতে পাই যে, রাস্তায় পড়ে থাকা গুরুতর আহত মুসলিম যুবকদের পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে এবং বাধ্য করছে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য। ফাইজান, তাদের মধ্যে একজন, যে কিছুক্ষণ পরেই মারা যায়।

শত শত নাচার মানুষের কল পুলিশ অবহেলা করে। এক পর্যায়ে অগ্নি-সংযোগ ও হননের পালা শেষ হল। শেষ পর্যন্ত শত শত অভিযোগ গ্রহণও করা হয়। তবে ভুক্তভোগীদের দাবি, আক্রমণকারীর নাম-পরিচয় এবং বন্দুক ও তলোয়ারধারী উন্মত্তদের আওড়ানো সাম্প্রদায়িক স্লোগান অভিযোগ থেকে ছেঁটে ফেলতে পুলিশ বাধ্য করেছে। নির্দিষ্ট অভিযোগগুলোকে মামুলি পর্যায়ে রূপান্তরিত করা হয় যাতে তা নিষ্পত্তিহীন পড়ে থাকে এবং অপরাধীরা রক্ষা পায়। (ঘৃণ্য অপরাধ থেকে ঘৃণাকে বাদ দেয়া হয়েছিলো।)

ঐ হোয়াটসএপ চ্যাটের একটিতে, উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে বসবাসকারী একজন নির্দিষ্ট মুসলিম এক্টিভিস্ট যিনি বারংবার চাক্কা জ্যামের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করছিলেন, চূড়ান্ত তিক্ততায় ভরা একটা পুনরুদ্ধারযোগ্য মেসেজ দিয়ে গ্রুপটি ত্যাগ করেন। এই সেই মেসেজ যেটি পুলিশ এবং মিডিয়া বাজেয়াপ্ত করে এবং ফলাও করে তাদের ওয়েবে প্রচার করে পুরো গোষ্ঠীটাকে নেতিবাচক ভাবে তুলে ধরতে। এদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের সর্বাধিক সম্মানিত অ্যাক্টিভিস্ট, শিক্ষক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতারা। আর তাদের উপস্থাপন করা হচ্ছে সার্বিক সহিংসতার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে। এমনকি তাদের নাকি হত্যাযজ্ঞের মত অভিপ্রায়ও আছে। এর চেয়ে হাস্যকর আর কি হতে পারে?

তবে বেকসুর প্রতিপন্ন হতে তাদের লাগতে পারে বছরের পর বছর। ততোদিন তাদের হয়তো কারাগারের বন্দী রাখা হতে পারে, তাদের জীবন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, যেখানে কিনা আসল খুনি ও উস্কানিদাতারা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করবে এবং নির্বাচন জিতবে। শাস্তির উদ্দ্যেশ্যেই প্রক্রিয়াটি করা হয়েছে।

ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি স্বতন্ত্র মিডিয়া রিপোর্ট, নাগরিক সত্যানুসন্ধান এবং মানবাধিকার সংস্থা দাবি করছে, উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সংগঠিত সহিংসতায় দিল্লি পুলিশ জড়িত। ২০২০ সালের আগস্ট মাসের একটি রিপোর্টে এমনেস্টি ইন্টার ন্যাশনাল জানায় যে, আন্দোলনকারীদের উপর নির্যাতন ও নিপীড়ন এবং উন্মত্তদের সহযোগিতার জন্য দিল্লী পুলিশ পুরোপুরি দোষী। আঁতকে ওঠার মত কতক ভিডিও যা অমরা সবাই দেখেছি, তার ময়না করার পর এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়। সেই থেকে এমনেস্টির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এবং এর ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। তাদেরকে ভারতীয় অফিস বন্ধ করতে বাধ্য করা হয় এবং ভারতে কর্মরত ১৫০ জন কর্মীকে বাদ দিয়ে দিতে হয়।

 

যখন পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে তখন প্রথমেই চলে যেতে হয় বা চলে যেতে বাধ্য করা হয় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের। এই নজির আমরা আগে কোন দেশে লক্ষ্য করেছি? ভাবুন। অথবা গুগল করুন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি স্থায়ী জায়গা চায় ভারত। বৈশ্বিক ব্যবস্থায় হয়ে উঠতে চায় একটি স্বর। বিশ্বের পাঁচ পরাশক্তির সারিতেও থাকতে চায় ভারত, যারা কিনা নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চুক্তিকে অনুমোদন দেয় না। আসলে ভারত চায় একটি একদলীয় গণতন্ত্র (অক্সিমোরোন) যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে শূন্য কোঠায়।

পুলিশের পাতানো ২০২০ সালের অযৌক্তিক দিল্লি ষড়যন্ত্র এবং একইভাবে  ২০১৮ সালের ভিত্তিহীন ভীম-কোরেগাও ষড়যন্ত্রের (হুমকি ও অপমানের অংশ হচ্ছে এই অযৌক্তিকতা) আসল মতলব হচ্ছে অ্যাক্টিভিস্ট, ছাত্র, আইনজীবী, লেখক, কবি, প্রফেসর, ট্রেড ইউনিয়নিস্ট এবং অবাধ্য এনজিওগুলিকে কারারুদ্ধ করা এবং চাপে রাখা। এর আসল উদ্দ্যেশ্য কেবল অতীত ও বর্তমানের ভয়াবহতা মুছে ফেলা নয় বরং আগামীতে যা আসবে তার জন্য মেঝে সাফ করে রাখা।

আমি মনে করি এই ১০ লাখ পাতার প্রমাণ সংগ্রহ এবং আদালতের দুই হাজার পৃষ্ঠার রায়ের জন্য আমদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কারণ এটা প্রমাণ করে যে গণতন্ত্রের শব নিয়ে এখনো টানা হেঁচড়া চলছে। উত্তর প্রদেশের হাথরাসে খুন হওয়া মেয়েটির মতো গণতন্ত্রের শব দাহ এখনো হয়নি। দেহাবশেষ হয়েও এটি এখনো নিজের ভার টানছে, আশপাশের সবকিছুকে ধীর করে দিচ্ছে। এই দিন বেশি দূরে নয় যেদিন এটাকে ছুঁড়ে ফেলা হবে এবং সবকিছু তার গতি পাবে। আর তখন আমাদেরকে শাসকদের অব্যক্ত স্লোগান হয়ে উঠতে পারে, “এক ধাক্কা অওর দো, ডেমোক্রেসি গাড় দো”। পুঁতে ফেলো।

যখন অমন দিন আসবে তখন বছরে হেফাজতে ১৭০০ হত্যাকাণ্ডকে আমাদের সাম্প্রতিক, গৌরবময় অতীতের স্মৃতির মতো মনে হবে।

এইসব ছোটখাট ব্যাপারকে প্রশ্রয় দিলে চলবে না। তারচে বরং  আসুন, আমারা ভোট দিতে থাকি তাদের যারা আমাদের ঠেলে দিচ্ছে ক্ষুধা আর যুদ্ধের দিকে,যারা ছিন্নভিন্ন করে ফেলছে আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।

তারা অন্তত আমাদেরকে একটি বিরাট মন্দির তো গড়ে দিচ্ছে। এটা তো কম কথা নয়!!

তথ্যপঞ্জি

[১]  Huffington Post, Uttar Pradesh Reported 400 Custodial Deaths Last Year, Highest In India, 16/09/2020

[২] Times of India, North East Delhi violence have to confront Umar Khalid with 11 Lakh pages of data

[৩] Huffington Post, Umar Khalid Case: Delhi Police Months-Long Delay Means Vital Video Evidence Destroyed , 29/09/2020

[৪] News ClickBilkis Bano Case, 04 May 2017

মূল লেখার হদিস: Two conspiracies and a cremation, Scroll.in, ৩ অক্টোবর,২০২০

 

 

লুবনা সুলতানা

লুবনা সুলতানা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পড়াশোনা করছেন জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগে।