- অনুবাদ: রাশিব রহমান
চার বছর পর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই পুঁজিবাদী দল তাদের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর সমর্থনে তিলকে তাল প্রচার করতে গণমাধ্যমে অসীম প্রাইম-টাইম [যে সময়ে সর্বাধিক মানুষ দেখে – অনুবাদক] পায়। ২০ আগস্ট শেষ হওয়া চারদিনব্যাপী ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশন (ডিএনসি) সচরাচরের চেয়ে খুব কমই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার জন্য শুধু কোভিড-১৯কে দায়ী করা চলে না। আনুষ্ঠানিকভাবে জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট এবং কমালা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত করা ছাড়া কোন প্রকৃত প্রতিশ্রুতি বা তাৎপর্যপূর্ণ কোন পরিবর্তন কর্মসূচি প্রস্তাব করা হয়নি। সবকিছু আচ্ছন্নকারী বার্তা ছিল, “জো বাইডেনকে ভোট দিন, কারণ তিনি ট্রাম্প নন”। এমনকি তাদের প্রাথমিক স্লোগান “বিল্ড ব্যাক বেটার” এর শব্দ আতঙ্কজনকভাবে ২০১৬ সালের ট্রাম্পের “মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন” এর মতই শোনাচ্ছে।
কোভিড-১৯ সংকটে বাইডেন আরো পরীক্ষা এবং মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার দাবি করেছেন। কিন্তু ডিএনসি কর্মসূচি থেকে ‘মেডিকেয়ার ফর অল’ বাদ পড়ে গেল। মহামারিকালে ৪০ মিলিয়নের অধিক মার্কিনি চাকরি এবং স্বাস্থ্য ইন্স্যুরেন্স হারিয়েছেন। বাইডেন স্বাস্থ্যসেবা সংকট মোকাবেলায় কোন পরিকল্পনা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি তিনি এও বলেছেন যে তার ডেস্কে ‘মেডিকেয়ার ফর অল’ বিল পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ভেটো দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে না পেরে মারা যায়। মহামারিকালে কমিউনিটি অব কালারের [আফ্রিকান, আফ্রিকান আমেরিকান, এশিয়ান, ল্যাটিনো, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আমেরিকান, ন্যাটিভ আমেরিকান ইত্যাদি সমন্বিত জনগোষ্ঠী- অনুবাদক] মধ্যে অসমঞ্জস মৃত্যু ছিল তার প্রত্যক্ষ ফল। যখন ‘মেডিকেয়ার ফর অল’ এর প্রতি ভোটারদের অভূতপূর্ব সাড়া দেখা যাচ্ছে, তখনও ডিএনসি নেতৃত্বকে বড় বড় ঔষধ প্রস্তুতকারী ও স্বাস্থ্য ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুনাফা রক্ষায় সতর্ক দেখাচ্ছে।
ডিএনসি ২০২৬ সাল নাগাদ কেন্দ্রীয় ন্যূনতম মজুরি ঘন্টায় ১৫ ডলারে উন্নীত করা সমর্থন করে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে ন্যূনতম মজুরি ঘন্টায় ২০ ডলার হয়। আরেকটি সুনির্দিষ্ট বিষয়, বাইডেনের ওয়েবসাইট অটো শিল্পে আরো একটি বেইল আউট চাইছে। ২০০৯ সালে ওবামা-বাইডেন প্রশাসনের ঐ শিল্পে ৮০ মিলিয়ন ডলারের বেইল আউট ব্যাপক শ্রমিক ছাঁটাই এবং ধর্মঘটসহ অটো শ্রমিক ইউনিয়ন অধিকার সংকুচিত করেছে। ডিএনসি নেতৃত্বের জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি এবং করের সমাপ্তির আহ্বান দলের কর্মসূচি থেকে বাদ পড়ল।
বাইডেনের ওয়েবসাইট তাঁর পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কিছুই উল্লেখ করেনি। ডিএনসি আন্তর্জাতিক মঞ্চের ৯১ পাতার নথির শেষে এটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, বিশ্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের ব্যাপারে উভয় পুঁজিবাদী দলে পার্থক্য নেই বললেই চলে। The Boycot, divestment & sanction (BDS) আন্দোলন সমর্থক ফিলিস্তিনি-আমেরিকান আন্দোলনকর্মী লিন্ডা সৌসর ডিএনসিকে মুসলিম ভোটারদের যুক্ত করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা বাইডেন প্রচারকেরা প্রকাশ্যে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ডিএনসি ইসরায়েলের ফিলিস্তিন দখলের সমালোচনা করেনি। এটি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী দাবি সমর্থন করে।
পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার সমর্থনে মার্কিন ছোট-বড় নগরীগুলোতে ব্যপক গণবিক্ষোভ থেকে পরবর্তী মাসগুলোতে ওঠা পুলিশ অপসারণের ডাক ‘অতি বাম’ বলে বিবেচিত হল। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সরকারগুলো পুলিশ বিভাগের বরাদ্দ কমিয়েছে। কেউ কেউ বিলুপ্ত করায় মনোযোগ দিচ্ছে। কিন্তু বাইডেন পুলিশ অপসারণ সমর্থন করেন না। তিনি পুলিশ সংস্কারে আরো বরাদ্দ চেয়েছেন, যা ইতিমধ্যে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি ২৩ শে আগস্ট এবিসি’র ডেভিড মুরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বাইডেন “স্থানীয় পুলিশ সহায়তা থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার কেটে নেয়া বিল” প্রস্তাব করায় ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। এটি বিবেচনায় নিলে মোটেই বিস্ময় লাগবে না যে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন সিনেটর জো বাইডেন (জাতীয় পুলিশ কর্মকর্তা সমিতির সভাপতির সহযোগিতায়) বিতর্কিত ‘‘ক্লিনটন’স ক্রাইম বিল’’ আইনের খসড়া করেছিলেন, যার মাধ্যমে গণকারাবাস ঘটতে দেখা গিয়েছিল।
ট্রাম্প ভয়ঙ্কর। তাই বলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার খুঁটি অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা, প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ এবং পুলিশি বর্বরতাকে শ্রমজীবী ও নিপীড়িত জনগণের রুখে দাঁড়ানোর এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে শুধু ট্রাম্প না হওয়াটাই যথেষ্ট নয়। রাজপথের লড়াই অব্যহত রাখুন।
সম্পাদকীয় নোট: বহমান রচনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্কার্স ওয়ার্ল্ড পার্টির মুখপত্র ওয়াকার্স ওয়ার্ল্ড ’র সম্পাদকীয় নিবন্ধ Not Being Trump is Not Enoug ‘র অনুবাদ। প্রকাশিত হয় ২৭শে আগস্ট, ২০২০ ।