অরাজ
প্রটেস্ট; শিল্পী: অর্ডি; সূত্র: আর্টমাজিউর
প্রচ্ছদ » হাওয়ার্ড জিন।। প্রসঙ্গ ‘গণ অনানুগত্য’

হাওয়ার্ড জিন।। প্রসঙ্গ ‘গণ অনানুগত্য’

অনুবাদ: সহুল আহমদ

অনুবাদকের মন্তব্য: আমেরিকান প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, নাট্যকার, রাজনৈতিক দার্শনিক, সংগঠক ও চিন্তক হাওয়ার্ড জিনের এই সাক্ষাৎকারটি (Howard Zinn on Civil Disobedience) ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে নেয়া হয়েছিল। সম্প্রতি ২০১৮ সালে State of Nature –এ সাক্ষাৎকারটি পুনরায় প্রকাশিত হয়। সেই সাথে howardzinn.org –তেও প্রকাশিত হয়। হাওয়ার্ড জিন বিভিন্ন লেখাপত্রে Civil Disobedienceনিয়ে প্রবল সরব ছিলেন। তার এই সক্রিয়তা কেবল লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ ছিলনা, বাস্তবেও সেটা চর্চা করেছেন, আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, অংশ নিয়েছেন। সিভিল ডিজঅভিডিয়েন্সের বাংলা এখানে গণ অনানুগত্য করা হয়েছে। যদিও এর তর্জমা ‘আইন অমান্যকারী আন্দোলন’, ‘নাগরিক অবাধ্যতা’ও বিভিন্ন স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘আইন-অমান্যকারী আন্দোলন’ পুরো ঘটনাকে কেবল আইন অমান্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে অর্থকে একটু সংকীর্ণও করে ফেলে; আবার ‘নাগরিক অবাধ্যতা’ স্পষ্টত ‘নাগরিক-কেন্দ্রিক’ বা জাতিরাষ্ট্র কেন্দ্রিক, যেখানে কিনা নাগরিক হওয়া বা না-হওয়া আসলে সিলসাপ্পরের মধ্যে আটকে থাকে। ফলে ‘গণ-’ এর মধ্যে সিভিল অর্থে জনসমাজ বেশি মানানসই বলেই মনে করি।

হাওয়ার্ড জিন

আপনি একবার লিখেছিলেন যে, ডিরেক্ট একশন বা প্রত্যক্ষ সক্রিয়তা ‘বহু ধরনের পদ্ধতিকে ধারণ করে, আমাদের কল্পনাই কেবল এর সীমানা’। বর্তমানে আপনি কোন কোন পদ্ধতি পেয়েছেন? এবং আপনার কল্পনা এগুলোতে কোন সীমা আরোপ করে দেয়?

হাওয়ার্ড জিন: প্রত্যক্ষ সক্রিয়তার অর্থ হচ্ছে আপনার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজ করার জন্য আবেদন নিবেদন বা তদবির করার পরিবর্তে আপনার প্রতিবাদের মূল উদ্দেশ্যে বা নালিশের মূল উৎসের ওপর সরাসরি এক্ট বা কাজ করা। ঐতিহাসিকভাবে ও বর্তমানে আমরা ধর্মঘটগুলোতে দেখছি: যেমন যে কর্পোরেশনগুলো তাদের কর্মচারীদের শোষণ করে অথবা যুদ্ধের জন্য অস্ত্র তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম হিসাবে ধর্মঘটগুলো। প্রত্যক্ষ সংগ্রামের আরেকটি রূপ হচ্ছে নাশকতার বিভিন্ন রূপসহ অহিংস [নন-ভায়োলেন্ট] কর্মকাণ্ড [অর্থাৎ, মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতা এড়ানো]।

১৯৮০ সালের দিকে ploughshares গোষ্ঠীগুলো (আমাদের তলোয়ারকে পরিণত কর লাঙলে) অস্ত্র তৈরিকারী সংস্থাগুলোতে আক্রমণ করা শুরু করে, এবং এই কোম্পানিগুলোর কাজকর্মের প্রতিবাদ জানিয়ে ছোট ছোট নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করে। এইতো সম্প্রতি দি সেন্ট প্যট্রিক ফোর নামক একটি ধর্মীয় শান্তিবাদী গোষ্ঠী ইরাক যুদ্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে নৌবাহিনীর একটি প্রতিষ্ঠানে রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। বয়কটও আরেক ধরণের প্রত্যক্ষ সংগ্রামের রূপ। ১৯৬০ এর দশকে ক্যলিফোর্নিয়ার খামার কৃষকরা ক্ষমতাশালী উৎপাদকদের বিরুদ্ধে জাতীয়ভাবে আঙুর বয়কট শুরু করে। এটি কৃষকদের জন্য ভালো অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। অনৈতিক যুদ্ধ ত্যাগ করা, অথবা যুদ্ধের তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানানোও প্রত্যক্ষ সংগ্রামের একধরণের রূপ।

 

আপনি বলেন যে, আমাদের সমস্যা গণ-অনানুগত্যে নয়, বরঞ্চ গণ-আনুগত্যে। সক্রেটিস বলেছিলেন যে, ‘যুদ্ধে ও আদালতে, সবখানে আপনাকে তা-ই করতে হবে যা আপনার শহর বা দেশ আদেশ করে’। আপনার দাবি হচ্ছে যে, আমাদের মনে এই কথাগুলোকে খোদাই করে লিখে দেয়া হয়েছে। ইতিহাসে ভয়াবহ অন্যায়ের মুখোমুখি হয়েও কর্তৃপক্ষের কাছে নতি স্বীকারের বহু নজির এবং বিদ্রোহের অতি অল্প নজির পাওয়া যায়। মানুষ কেন এতো সহজে অনাচার মেনে নেয়?

হা জি: মানুষ দুই কারণে অন্যায় অবিচারের কাছে নতি স্বীকার করে: একটি হলো তারা এটাকে অন্যায়-অবিচার হিসেবে ঠাহর পারে না। একজন যুবক সামরিক বাহিনীকে যোগ দিতে পারে এইটা না জেনেই যে তাকে এমন একটা যুদ্ধে যোগ দিতে হতে পারে যা নৈতিকভাবে ন্যয়সঙ্গত নয়। মিডিয়া এবং শিক্ষাব্যবস্থা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ঐতিহাসিক নজির সম্পর্কে জানাতে নাও পারে। অথবা, জনগণ অন্যায়-অবিচারের কাছে নতি স্বীকার করতে পারে এই বোধ থেকে যে, তাদের আর কোনো বিকল্প বা উপায় নেই। যদি তারা অমান্য করে তাহলে তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে, হয়তোবা চাকরি হারাতে পারে, হয়তোবা জেলে ঢোকানো হতে পারে। তাদেরকে প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, এমনকি তাদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা রাখতে শেখানো হয়েছে, বলা হয়েছে যে, তাদেরকে অন্যায়-অবিচারের কাছে নতি স্বীকার করতে হবে কারণ তাদের সরকার, বা তাদের চার্চ বা তাদের পরিবারের প্রতি অনেক ঋণ রয়েছে। (দি ক্রিটোতে যেমন করে সক্রেটিস বলেন, তিনি মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতে পারবেন না, কারণ এই সরকারের প্রতি তার ঋণ রয়েছে।)

শিল্পী: জ্যাকব লরেন্স
সূত্র: পিন্টারেস্ট

আমাদের মতো কেউ কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে যে, বিদ্যমান ব্যবস্থা সামাজিক পরিবর্তন আনার জন্য আইনি ও রাজনৈতিক পদ্ধতি সরবরাহ করে। বিচারপতি আবে ফর্টাস (যিনি Concerning Dissent and Civil Disobedience শীর্ষক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন) এদের মধ্যে একজন। ওনার প্রতি আপনার জবাব খুঁজে পাওয়া যায় Disobedience and Democracy: Nine Fallacies on Law and Order (১৯৬৮) গ্রন্থে। এখানে এবং অন্যান্য লেখালেখিতে আপনি দাবি করেন যে, আইনের শাসন সম্পদ ও ক্ষমতার অসম বন্টনকে আরো শক্তিশালী করে, এবং অন্যায়-অবিচার রোধে ব্যালট বক্স একটি অকার্যকর হাতিয়ার হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। যারা এখনো বলেন আইন হচ্ছে নিরপেক্ষ এবং গণতন্ত্র এখনো ভালোমতো বেঁচে আছে, তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কি বলবেন?

হা জি: আপনি যদি ইতিহাসজুড়ে বিচার ব্যবস্থার কাজকারবারগুলো অধ্যয়ন করেন, তাহলে পষ্ট হয় যে, এটি গরিবের চাইতে ধনীকে, কালোর চাইতে সাদাকে, র‍্যাডিকেলের চাইতে গোঁড়াদেরকে বেশি সুবিধা দিয়েছে। উঁচু শ্রেণি থেকে আগত এবং প্রায়শই রাজনৈতিক অভিজাত কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারক, ব্যবস্থার পদে পদে টাকার আধিপত্য – এই ব্যবস্থার আসল কাঠামোই এটা নিশ্চিত করে যে, আদালতে দরিদ্ররা আরো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হন।

আপনি যদি ইতিহাসজুড়ে কংগ্রেসে পাস হওয়া আইনগুলো অধ্যয়ন করেন, একেবারে প্রথম কংগ্রেসের হ্যামিল্টনের অর্থনৈতিক কর্মসূচি থেকে শুরু করে বর্তমানকালের করআইন পর্যন্ত, যেগুলো কিনা কর্পোরেশন ও ধনীদের সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে, তাহলে আপনি দেখবেন যে আমাদের প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা প্রধানত ধনী লোকদেরই প্রতিনিধিত্ব করে। আপনি যদি যুদ্ধগুলো পর্যবেক্ষণ করেন তবে আপনি দেখবেন যে আমাদের তথাকথিত ‘চেক এন্ড ব্যালেন্স’, মানে যেখানে কিনা সরকারের কোনো শাখাই একক আধিপত্য ধরে রাখতে পারে না, তা আদতে যুদ্ধের কালে কোনো কাজই করতে পারে না। প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, কংগ্রেস আনুগত্যের সাথে তাল মিলিয়ে যায়, এবং সুপ্রিম কোর্ট কখনোই এমন রায় দেয়নি যে, যুদ্ধটি অসাংবিধানিক। যদিও বিচারিক পর্যালোচনা সম্ভবত তাদের কাজেরই অংশ। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকে সংগঠিত সকল যুদ্ধই সংবিধানের এই বাধ্যবাধকতাকে লঙ্ঘন করেছে যে, কেবল কংগ্রেসই যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে।

 

কামু বলেছিলেন, ‘১৭৮৯ এবং ১৯১৭ তারিখগুলো এখনো ঐতিহাসিক, কিন্তু এগুলো আর ঐতিহাসিক নজির নয়’। তার মতে, রাষ্ট্রের হাতে থাকা শক্তিশালী অস্ত্রশস্ত্র এবং একটা দেশের সহিংস অভ্যুত্থানে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধারম্ভের বিপদ এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, পুরোনো অর্থে বিপ্লবের কাল অতিক্রান্ত হয়েছে। মনে হয় কামুর ভাবনা আপনার মতোই, যখন আপনিও আপনার লেখাপত্রে বিপ্লবের সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন এবং অহিংস প্রত্যক্ষ সংগ্রামের পক্ষে ওকালতি করেন। কিন্তু একদা ইতিহাসে বিপ্লব যেমন কার্যকর ছিল অহিংস প্রত্যক্ষ সংগ্রাম কি তেমন কার্যকর হবে?

হা জি: আমাদের প্রথমেই সহিংস বিপ্লবের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে এটা ব্রিটিশ শাসক শ্রেণিকে সরিয়ে স্থানীয় শাসক শ্রেণিকে বসিয়েছে, ফরাসি বিপ্লব নেপোলিয়নের একনায়কতন্ত্র এবং বোর্বন রাজতন্ত্রের দিকে চলে যায়, রাশিয়ান বিপ্লব স্ট্যালিনবাদের দিকে যায় এবং চীনে মাওবাদের দিকে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে আমরা মূলত কৃষ্ণাঙ্গদের অহিংস বিপ্লব দেখি, এটাই দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্য নীতির ইতি টেনেছিল। এটি বহু সমস্যার সমাধান করতে না পারলেও, গৃহযুদ্ধ বা বিপ্লবের ব্যাপক সহিংসতা ছাড়াই এটি একটি মৌলিক সমস্যার সমাধান করেছে। আমরা কোনো ধরণের যুদ্ধ বা ব্যাপক সহিংসতা ছাড়াই একনায়কতন্ত্রকে হটানোর বহু নজির দেখেছি, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াতে, অথবা ১৯৮৯ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে বা পূর্ব ইউরোপে। কোনো বিপ্লবই, তা সহিংস বা অহিংস যাই হোক না কেন, সমস্যাগুলোকে পুরোপুরি সমাধান করতে পারে না। কিন্তু অহিংস বিপ্লব যুদ্ধের ভয়াবহতা এড়িয়ে ন্যায়বিচারের পথে একটি পদেক্ষেপ গ্রহণ করে।

Declarations of Independence-তে আপনি লিখেছিলেন, ‘ভিয়েতনামে যুদ্ধ যতই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে এবং যতই স্পষ্ট হচ্ছে যে বিপুল সংখ্যক অ-যোদ্ধা বা সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারাচ্ছেন; সায়গন সরকার দুর্নীতিগ্রস্থ ও অ-জনপ্রিয় এবং সেটা আমাদের সরকারেরই নিয়ন্ত্রণে; এবং আমাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যুদ্ধ সম্পর্কে আমাদেরকে মিথ্যা বলেছেন, যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন তত আশ্চর্য গতিতে বেগবান হয়েছে।’ এখন ভিয়েতনামের স্থলে ইরাককে প্রতিস্থাপন করা যাক, এবং ঝরে পড়া হাজারো ইরাকি প্রাণের কথা ভাবুন; আমাদের ইচ্ছাকৃতভাবে ছুড়ে দেয়া আগুনে দেশটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে; আবু ঘারিব ও ফাল্লুজাহের ভয়াবহের কথা ভাবুন; দখলদারবাহিনীর স্বার্থরক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত পাপেট ইরাকি সরকারের কথা ভাবুন; এবং আমেরিকার জনগণকে গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র এবং সাদ্দাম হোসেনের সাথে আল-কায়েদার যোগসূত্র সম্পর্কে মিথ্যা গুলিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। সত্য যে, নব্য-রক্ষণশীল এজেন্ডা বহুলাংশে নিন্দিত হয়েছে এবং বর্তমানে প্রতি চারজনের একজনেরও কম সংখ্যাক আমেরিকান বুশের ইরাক-পরিকল্পনার বিরোধী, তবু কেন যুদ্ধ-বিরোধী আন্দোলন আদতে বৃদ্ধি পাচ্ছে না? ভিয়েতনামের পর কী পরিবর্তন হলো?

হা জি: এটা সত্য যে, যুদ্ধ-বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এখনো ভিয়েতনামের পর্যায়ের পৌছায়নি যেখানে কিনা সরকারকে যুদ্ধ থেকে সরে আসার কথা ভাবতে হয়েছিল। তবু আন্দোলন ৮০% যুদ্ধ-সমর্থনকে ৬৫% যুদ্ধ-বিরোধী অংশে পরিণত করেছে। সরকার কর্তৃক মিডিয়ার ওপর বৃহত্তর নিয়ন্ত্রণের কারণে এই সময়ে আন্দোলন গড়ে তোলাও কষ্টসাধ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ভাবেন যে আমরা যুদ্ধ-বিরোধী আন্দোলন বিকাশের কেবলমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ের রয়েছি, এবং সেটা বেশ বড়োসড়ো সময় নিয়েছে, কিন্তু যে দিকে এটা এগিয়েছে তা স্পষ্টত ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আমরা যুদ্ধ অবসানের রাস্তাতেই আছি। আরেকটি কারণ হচ্ছে বুশ প্রশাসনের প্রকৃতি; জনমত গ্রহণে জনসন বা নিক্সন প্রশাসনের চাইতে এই প্রশাসন আর বেশি বধির; আরো নৃশংস ও স্বৈরাচারী। একটা ছোট সিদ্ধান্তগ্রহণকারীর দল কেবল নিজেদের কথাই শুনছে।

স্ট্রাগল;
শিল্পী: জ্যাকব লরেন্স;
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস

১৯৯৮ সালে ডেভিড বার্সামিয়ান যখন আপনার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তখন আপনি তাকে ল্যাঙ্গস্টন হিউজসের A Dream Deferred কবিতা শুনিয়েছিলেন; কবিতাটা আপনার A People’s History of the United States তেও আছে। কবিতায় বলা হচ্ছে যে: ‘What happens to a dream deferred? Does it explode?’ যদি সমস্ত বন্দি স্বপ্ন একদিন বিষ্ফোরিত হয়, সেই বিস্ফোরণটা সংগঠিত এবং নিয়ন্ত্রিত হবে বলে কি আপনি মনে করেন? মানে, যেমন করে সিভিল রাইট আন্দোলনের বেশিরভাগটাই হয়েছে নাকি নির্বিচারে সহিংস ও উন্মত্ত হবে, যেমন করে আজ মধ্যপ্রাচ্যে হচ্ছে?

হা জি: আমাদের দেশে অহিংস আন্দোলন ও অর্জনের (যেমন, নাগরিক অধিকার আন্দলন, যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন, নারীদের আন্দোলন) আমাদের ঐতিহ্যের কারণে আমি আশা করি যে এটা বেশিরভাগ অহিংসই হবে। (কোনো অহিংস আন্দোলনই কখনোই একদম নিখুঁত হয়নি)। এতে নাগরিক অবাধ্যতা বা গণ-অবাধ্যতা বা গণ অনানুগত্য (সিভিল ডিসঅভিডিয়েন্স), সামরিক বাহিনীতে বিদ্রোহ, ধর্মঘট, বয়কট, মিছিল বা প্রতিবাদী সমাবেশ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে; কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে আমরা যে ধরণের পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি তা হবে না।

সহুল আহমদ

সহুল আহমদ, লেখক, অনুবাদক ও অ্যক্টিভিস্ট। গবেষণার পাশাপাশি সমকালীন বিষয়াবলীর বিশ্লেষক। জন্ম সিলেটে, ১৯৯১ সনে। পড়াশোনা করেছেন শাবিপ্রবিতে, পরিসংখ্যান বিভাগে। একাধিক জার্নাল সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত। প্রকাশিত বই: মুক্তিযুদ্ধে ধর্মের অপব্যবহার; জহির রায়হান: মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক ভাবনা; সময়ের ব্যবচ্ছেদ (সহ-লেখক সারোয়ার তুষার)। অনুবাদ: ইবনে খালদুন: জীবন চিন্তা ও সৃজন।