অরাজ
আর্টওয়ার্ক: দ্য মে শিল্পী: ভাস্কো সূত্র: কাটেুর্ন মুভমেন্ট
প্রচ্ছদ » মে দিবসের অরাজপন্থী উদযাপন

মে দিবসের অরাজপন্থী উদযাপন

ইস্ক্রা

১৮৮৭ সালে শিকাগোতে চার অরাজপন্থীর (Anarchist) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। পঞ্চমজন জল্লাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে জেলেই আত্মহত্যা করেন। আরও তিনজনকে ছয় বছর কারাদন্ড ভোগ করতে হয়। অবশ্য গভর্নর আল্টজেল্ড (Altgeld) পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত মামলাটিকে হিস্টিরিয়া আক্রান্ত রায় বলে মন্তব্য করেন এবং তাদের ক্ষমা করে দেন। তিনি ঐ মামলার জুরি এবং বিচারককে দারুণভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী বলেন, এ হলো খোদ “নৈরাজ্যের বিচার” এবং এর মাধ্যমে সকল প্রকার নৈরাজ্যকর ভাবনার মৃত্যু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অরাজপন্থীরাই ছিলেন ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের প্রবর্তক এবং তাদের ত্যাগকে স্মরণ করতেই মে দিবসকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। শিকাগো শহরের এক জমায়েতকে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করার সময় তাদের দিকে বোমা মারার মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় অরাজপন্থীদের। ১ মে, ১৮৮৬ সালে শিকাগোতে এই জমায়েতটা ছিলো দৈনিক আট ঘন্টা কর্মসময়ের দাবীতে ৪ লক্ষ শ্রমিকের সমাবেশ।

তবুও, ১৮৮৭ সালের পর শিকাগোতে অরাজপন্থী চিন্তাভাবনার মৃত্যু ঘটে নাই। আজও বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলতে এটা অনুপ্রেরণা যোগায়। আপনিও এই সংগ্রামে শরিক হউন।

শিকাগো সংগ্রামের ইতিহাস
মে দিবস কেন আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেল আর একে উদযাপনের কারণই বা কী – সেই সম্পর্কে কমসংখ্যক মানুষেরই জানাশোনা আছে। প্রায় এক শতাব্দী আগে আমেরিকান ফেডারেশন অফ লেবার তাদের ঐতিহাসিক প্রস্তাবনায় “১ মে, ১৮৮৬ সালের পর থেকে আইনত দৈনিক ৮ ঘন্টা কর্মসময়ের দাবী” করলে এই সংগ্রামের সূচনা হয়।

উল্লিখিত সময়ের আগে হাজার হাজার শ্রমিক সময়-সংকোচনের দাবীতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। দক্ষ-অদক্ষ, কালো-সাদা, নারী-পুরুষ, স্থানীয়-অভিবাসী নির্বিশেষে সকলেই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।

শুধুমাত্র শিকাগোতেই ৪ লক্ষ শ্রমিক আন্দোলন করেছিলেন। সেখানকার স্থানীয় একটি পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়, “কল-কারখানাগুলোর চিমনি থেকে কোনো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যেন ছুটির দিন।” এই শহরই ছিলো আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল। আর, এখানেই অরাজপন্থীরা একেবারে সামনে থেকে শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এবং তার পরিসর নিতান্ত ছোটোখাটো নয়। তাদের সক্রিয়তার ফলেই শিকাগো ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের একটি অন্যতম কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়, যা পরবর্তীতে আট-ঘন্টা আন্দোলনে বিশাল ভূমিকা রাখে।

১ মে, ১৮৮৬ সালে আট ঘন্টা কর্মসময়ের দাবীতে ধর্মঘটে পুরো শহর উত্তাল হয়ে উঠলে ম্যাককরমিক হার্ভেস্টার কোম্পানি (McCormick Harvester Co.) এর অর্ধেক শ্রমিক রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। এর দুইদিন পরে “লাম্বার শোভারস” (lumber shovers) ইউনিয়নের ৬ হাজার শ্রমিকের একটি গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং তারাও রাস্তায় নেমে আসেন। ঐ সমাবেশটি ম্যাককরমিকের ঠিক এক ব্লক দূরে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে ম্যাককরমিকের প্রায় ৫০০ শ্রমিক অংশগ্রহণ করে।

শ্রমিকেরা জনৈক অরাজপন্থী অগাস্ট স্পাইসের (August Spies) বক্তৃতা শোনেন। অগাস্ট স্পাইসকে সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য মনোনীত করে সেন্ট্রাল লেবার ইউনিয়ন। স্পাইস যখন শ্রমিকদের ঐক্যবন্ধ হবার আহবান জানাচ্ছিলেন এবং কর্তৃপক্ষের হাতে সবকিছু সঁপে দিতে নিষেধ করছিলেন তখন ধর্মঘট বিরোধীরা ম্যাককরমিক থেকে বেরিয়ে এলো।

আর্টওয়ার্ক: হে মার্কেট রায়ট
সূত্র: নিউএগ

ধর্মঘটীরা লাম্বার শোভারদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে রাস্তা ধরে মার্চ করলেন এবং ধর্মঘট বিরোধীদের ফ্যাক্টরিতে ফিরে যেতে বাধ্য করলেন। হঠাৎ, ২০০ সদস্যের একদল পুলিশ এসে পড়লো এবং কোনোরকম সতর্কবার্তা না দিয়েই জমায়েতের উপর চাবুক আর রিভলবার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। তারা একজন ধর্মঘটীকে হত্যা এবং পাঁচ-ছয়জনকে মারাত্মকভাবে জখম করলো। আরও অগুণতি মানুষ আহত হলেন।

এই বর্বোরচিত হামলা দেখে স্পাইস তৎক্ষণাৎ আবাইটার-জাইটুং (Arbeiter-Zeitung, জার্মান অভিবাসীদের জন্য প্রকাশিত একটি অরাজপন্থী দৈনিক পত্রিকা) এর কার্যালয়ে যান এবং শিকাগোর শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে একটি বিজ্ঞপ্তিতে ঐ রাতেই একটি প্রতিরোধ সমাবেশে যোগদান করতে আহবান করেন।

হেমার্কেট স্কোয়ারে (Haymarket Square) অনুষ্ঠিত প্রতিরোধ সমাবেশে স্পাইস ছাড়াও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আরও দুজন অরাজপন্থী এলবার্ট পারসন্‌স (Albert Parsons) এবং স্যামুয়েল ফিল্ডেন (Samuel Fielden) বক্তৃতা করেছিলেন।

পুলিশী আক্রমণ
পুরো বক্তৃতা জুড়েই উপস্থিত সমাবেশ সুশৃঙ্খলা বজায় রেখেছিল। মেয়র কার্টার হ্যারিসন (Carter Harrison) শুরু থেকেই উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মতে, “পুলিশী হস্তক্ষেপ করার মতো কোনো ঘটনাই সেদিন ঘটে নাই।” তিনি পুলিশের ক্যাপ্টেন জন বনফিল্ডকে (John Bonfield) এই কথাই সুপারিশ করেছিলেন এবং সংরক্ষিত পুলিশ বাহিনীকে ফিরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

ঘটনার সূত্রপাত রাত প্রায় দশটায়, ফিল্ডেন তখন সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষনা করার পথে। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল এবং মাত্র ২০০ জন মানুষ তখন স্কোয়ারে ছিলেন। হঠাৎ, ১৮০ জনের একটি পুলিশ কলাম বনফিল্ডের নেতৃত্বে এগিয়ে আসে এবং সকলকে দ্রুত সড়ে পরার নির্দেশ দেয়। ফিল্ডেন প্রতিবাদ করে বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছি।”

বোমাবাজি
এমন সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে একটা বোমা মারা হয়। এতে একজন পুলিশ মারা যায়, ছয়জন গুরুতর আহত হয় এবং আরও প্রায় ১৭ জন্য আহত হয়। পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে। পুলিশের গুলিতে সেদিন কতজন আহত ও নিহত হয় তা আর কখনোই জানা যায়নি।

শিকাগোর উপর এরপর ভয়ংকর তাণ্ডব চললো। সমাজতান্ত্রিক এবং অরাজপন্থীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে প্রেস এবং তার অনুগামীরা এর প্রতিশোধ নিতে চাইলো। তাদের অধিবেশন কেন্দ্র, ইউনিয়ন অফিস, ছাপাখানা এবং ঘরবাড়িতে তল্লাশি চললো। পরিচিত সকল সমাজতন্ত্রী এবং অরাজপন্থীদের বন্দী করা হলো। এমনকি বহু মানুষ যারা জন্মেও সমাজতন্ত্র বা অরাজপন্থার নামও শোনেন নাই তাদেরও গ্রেফতার ও হেনস্থা করা হলো। “আগে ধরো, পরে আইনের ধারা খোঁজো”, রাজ্যের এটর্নি জেনারেল জুলিয়াস গ্রিনেল (Julius Grinnell) প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য দিলেন।

বিচার
অবশেষে আট জন ব্যক্তিকে “হত্যায় ইন্ধন” যোগানোর দায়ে আদালতে তোলা হল। তারা হলেন স্পাইস (Spies), ফিল্ডেন (Fielden), পারসন্‌স (Parsons) এবং আরও পাঁচজন অরাজপন্থী যারা সকলেই শ্রমিক আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। এই পাঁচজন হলেন এডলফ ফিশার (Adolph Fischer), জর্জ এঙ্গেল (George Engel), মাইকেল সোয়াব (Michael Schwab), লুইস লিং (Louis Lingg) এবং অস্কার নীবে (Oscar Neebe)।

২১ জুন, ১৮৮৬ সালে কুক কান্ট্রির ফৌজদারী আদালতে বিচার শুরু হয়। জুরিবোর্ডের সদস্যদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে এটর্নি গ্রিনেলের সুপারিশে একজন বিশেষ প্রতিনিধিকে কোর্ট জুরিবোর্ডের অন্যান্য সদস্য নিয়োগের ক্ষমতা দেয়। বিবাদী পক্ষকে সাক্ষ্য প্রমানের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। সেই বিশেষ প্রতিনিধি প্রকাশ্যে বললেন, “আমিই এই মামলাটি পরিচালনা করছি এবং আমি ভালোমতোই জানি কি করতে হবে। এই লোকগুলোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হবে।”

সাজানো জুরিবোর্ড
চূড়ান্তভাবে যে জুরিবোর্ড গঠন করা হলো তা এককথায় প্রহসন। ব্যবসায়ী এবং তাদের কেরানী আর নিহত পুলিশ কর্মকর্তার একজন আত্মীয়কে সদস্য করে জুরিবোর্ড গঠন করা হলো। রাষ্ট্রপক্ষ সুনিশ্চিত কোনো প্রমাণ দিতে পারে নাই যে, ঐ আট ব্যক্তির কেউ বোমা মেরেছিলেন অথবা কোনোভাবে বোমাবাজীর সাথে যুক্ত ছিলেন। এমনকি তারা এমন কাজে সায় দিয়েছিলেন তারও প্রমাণ মেলেনি। আসলে, ঐ আটজনের মধ্যে সেদিন সন্ধ্যায় কেবল তিনজন হেমার্কেট স্কোয়ারে উপস্থিত ছিলেন।

সেদিন কোনো বক্তা তাদের বক্তৃতায় সহিংসতার আহবান জানিয়েছিলেন এমন কোনো প্রমাণও মেলেনি। বরং, মেয়র হ্যারিসন তার জবানবন্দীতে বলেন বক্তৃতাগুলো যথেষ্ট মার্জিত ছিলো। কোনো ধরণের সহিংস পরিকল্পনারও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আসলে, পারসন্‌স তার ছোট্ট দুটি বাচ্চাকেও সমাবেশে নিয়ে এসেছিলেন।

আর্টওয়ার্ক: হে ডে
সূত্র: ফরসাও

সাজা ঘোষণা
শুরু থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আটজনকে কেবলমাত্র অরাজপন্থী বিশ্বাস এবং ট্রেড ইউনিয়নের কার্যকলাপের সাথে জড়িত হওয়ার দায়েই অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এটর্নি গ্রিনেলের জুরিদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতার সারসংক্ষেপ বিচার শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার সাক্ষ্য দেয়। “আইন ও নৈরাজ্য আজ বিচারের দাঁড়িপাল্লায়। গ্রান্ড জুরি এই লোকগুলোকে বেছে নিয়ে অভিযুক্ত করেছেন কারণ এরাই হলেন নাটের গুরু। এদের অনুসরণ করার চেয়ে বড় অন্যায় আর কোনোকিছুই হতে পারে না। মাননীয় জুরিগণ, এদের উপযুক্ত সাজা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। এদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান এবং সমাজকে বাঁচান।”

আগস্টের ১৯ তারিখে সাতজন অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় এবং নীবে কে ১৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। তাদের মুক্তির জন্য শক্তিশালী আন্তর্জাতিক প্রচারণার মুখে রাষ্ট্র “সমঝোতা” করতে বাধ্য হয় এবং সোয়াব এবং ফিল্ডেনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। জল্লাদের চোখকে ধোঁকা দিয়ে লিং মৃত্যুদণ্ডের একদিন আগে কারাগারেই আত্মহত্যা করেন। ১১ নভেম্বর, ১৮৮৭ সালে পারসন্‌স, এঙ্গেল, স্পাইস এবং ফিশারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ক্ষমা
৬ লক্ষ শ্রমজীবি মানুষ তাদের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করেন। নীবে, সোয়াব এবং ফিল্ডেনকে মুক্ত করার দাবী চলতেই থাকে।

২৬ জুন গভর্নর আল্টজেল্ড তাদের মুক্তি দেন। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন যে, তিনি এইজন্য তাদের মুক্তি দিচ্ছেন না যে তারা ইতিমধ্যেই অনেক শাস্তি পেয়েছেন। বরং, তারা আসলে নির্দোষ জন্যই তাদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। তারা এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সকলেই আসলে “হিস্টিরিয়া আক্রান্ত বিচার, পক্ষপাতদু্ষ্ট জুরি এবং বিচারকের” বিদ্বেষের শিকার।

কর্তৃপক্ষ মনে করেছিল যে এ ধরণের বিচার হলে আট-ঘন্টা কর্মসময়ের আন্দোলনের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়বে। এমনকি, পরবর্তীতে জানা যায় যে, পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পুলিশের দিকে বোমাও আসলে ক্যাপ্টেন বনফিল্ডের নিয়োজিত এজেন্টই মেরেছিল যাতে শ্রমিক আন্দোলনের ঘাড়ে দোষ চাপানো যায়।

স্পাইসকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়ার পর আদালতের উদ্দেশ্যে তিনি যে বক্তব্য দেন, তাতে এই ষড়যন্ত্র সফল না হওয়ার ব্যাপারে তাকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী দেখায়। “আপনারা যদি মনে করেন আমাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শ্রমিক আন্দোলনকে বরবাদ করা যাবে….যে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ নিপীড়িত মানুষ পরিত্রাণের আশায় বুক বেঁধেছে, তার বিপরীতে এই যদি আপনাদের মত হয়, তাহলে আমাদের ফাঁসিতেই ঝুলিয়ে দিন! এখন আপনারা একটি ছোট্ট স্ফুলিঙ্গকে নিভিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু, আপনার চতুর্দিকে যখন দাউদাউ করে আগুন জ্বলবে, দীর্ঘদিনের মাটিচাপা সেই আগুন আপনারা নেভাতে পারবেন না।”

বৈপ্লবিক রাজনীতি
শিকাগোতে মে দিবসের ঘটনাবলীর এক শতাব্দী পরে আজ আমরা কোথায় আছি? ইউনিয়নের ব্যানার নিয়ে আমরা এখন হেঁটে বেড়াই। বছরের এই একটিমাত্র দিনেই আমরা এটা করার সুযোগ পাই। তারপর আমরা সমবেত হয়ে বিরক্তিকর ইউনিয়ন আমলাদের ততোধিক বিরক্তিকর বক্তৃতা শুনি (অর্থহীনও বটে)। আমাদের মনে রাখতে হয় যে, একদা মে দিবসের এই দিনে পৃথিবীর সকল প্রান্তের শ্রমিকেরা তাদের শক্তি প্রদর্শন করেছিল, তাদের নায্য হিস্যা দাবী করেছিল এবং তাদের সাফল্য উদযাপন করেছিল।

“একদা” শব্দটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আবারো এটা করতে পারি। আমাদের স্বাধীন রাজনীতিতে আসতে হবে। সরকার এবং রুইকাতলাদের সাথে সহযোগিতা আর নয়। কোনো সংকীর্ণ অন্ধ অনুগমন আর নয়, সংগ্রামে আসল সংহতি জানাতে হবে সহকর্মীর সাথে। আমাদের এখনো মজুরি না কমিয়ে কর্মঘন্টার সংকোচন জরুরী, কর্মহীনদের জন্য কর্ম জরুরী।

আমাদের চাই বৈপ্লবিক রাজনীতি। সেই রাজনীতি যা আমাদের সত্যিকার সমাজতন্ত্রের দিশা দিতে পারে; যেখানে অন্যের স্বাধীনতাকে আক্রমণ না করা ব্যতীত স্বাধীনতার আর কোনো সীমা নাই। এমন সমাজতন্ত্র চাই যা সত্যিকার গণতন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত, বর্তমানের মত কোনো মিথ্যা গণতন্ত্র নয়, যেখানে শুধু শাসক নির্বাচনই চলে, শাসককে নির্বাচন না করার কোনো সুযোগ নাই। এমন সত্যিকার গণতন্ত্র চাই যেখানে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সকলের বলার অধিকার থাকবে। সুদক্ষভাবে সমন্বিত কর্মস্থল এবং কমুনিটি কাউন্সিল চাই। এমন একটা সমাজ চাই যেখানে উৎপাদন হবে প্রয়োজননির্ভর, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত কোনো গোষ্ঠীর লাভের জন্য নয়। এককথায়, চাই অরাজপন্থা ।

ইস্ক্রা